অনলাইন ডেস্ক : পেনশনভোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি দূর করতে এবার অ্যাপ চালু করছে সরকার। এখব আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিলছে পেনশন ও গ্রাচুয়েটি সুবিধা। আর অ্যাপ চালু হলেই লাইফ ভেরিফিকেশনেসহ সব ধরনের সুবিধা ‘আমার সেবা অ্যাপের’ মাধ্যমে পাওয়া যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যে সরকারি অফিসে না গিয়ে অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনে মিলবে এই সুবিধা। গুগল প্লে সেন্টারে গিয়ে ‘আমার সেবা মোবাইল অ্যাপ’ ডাউনলোড করলেই হবে। এই সেবা চালু হলে অ্যাকাউন্স পেনশনারদের লাইফ ভেরিফিকেশনের জন্য অফিসে সশরীরে উপস্থিত হওয়া লাগবে না। ঘরে বসে অ্যাপে যুক্ত হলে বোঝা যাবে তিনি জীবিত আছেন। পেনশনারের ছবি অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি যাচাই করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিস এ বিষয়ে কাজ করছে। কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি প্রোগ্রাম। অ্যাপের আরও সুবিধা হলো সরকারি অফিসে না-গিয়েই কর্মকর্তারা দেখতে পাবেন তাদের পেনশনের আবেদন কী অবস্থায় রয়েছে। জমা দিতে পারবেন প্রয়োজনীয় নথি। পেনশনার তার মাসিক পেনশন পেলেন কিনা তা ঘরে বসেই যাচাই করতে পারবেন। জিপিএফ স্টেটমেন্টও দেখা যাবে একই প্রক্রিয়ায়। পেনশন সমস্যা সংক্রান্ত যে কোনো আবেদনও করা যাবে।
পেনশনারদের আত্মীয়স্বজন মৃত পেনশনারের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে মৃত্যুর তথ্য এন্ট্রি দিতে পারবেন। প্রাপক তথ্যের ভিত্তিতে সিএএফও/পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্ট পেনশনারকে করবে। এতে পেনশনারের মৃত্যু পরবর্তী আর্থিক দেনা-পাওনা সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া নতুন করে পারিবারিক পেনশনের আর্থিক কোনো জটিলতায় পড়তে হবে না। ২০২০ সালের অক্টোবরে সরকার ই-পেনশন পোর্টাল চালু করে। তাতে পেনশনের বিষয়টি সুবিবধাজনক হয়েছে অনেকটাই। আবেদনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন এখন পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সুবিধা। এখন অ্যাপ চালু হলে লাইফ ভেরিফিকেশনেসহ সব ধরনের সুবিধা ‘আমার সেবা অ্যাপের’ মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
মহাহিসাব নিরীক্ষকও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, প্রতি মাসে পেনশনারদের এজি অফিসে বা ব্যাংক কাউন্টারে গিয়ে পেনশন নেওয়ার ঝামেলা পোহানো এখন অতীত ইতিহাস। শিগগির বার্ষিক লাইফ ভেরিফিকেশনের জন্য ও সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা উঠে যাচ্ছে। পেনশনাররা ঘরে বসে আমার সেবা অ্যাপে যুক্ত হয়ে এ কাজ করতে করতে পারবে।
প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় পেনশন ও গ্র্যাচুইটি বাবদ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে (পেনশন ও গ্র্যাচুইটি) খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। পেনশন ব্যবস্থা সহজ করার জন্য কয়েক বছর ধরে কাজ করছে সরকার। স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারির প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর বিলকিস জাহান রিমি বলেন, পেনশনারদের প্রায় সব সেবা এখন অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। আরও সহজে সেবা প্রদানের জন্য আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ‘আমার সেবা অ্যাপ’ চালু করা হবে। পেনশনার জীবত আছেন কিনা এজন্য প্রতি বছর একবার অ্যাকাউন্স অফিসে যেতে হয়। এটি চালু হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্স অফিসে গিয়ে পেনশনারদের লাইফ ভেরিফিকেশনে জন্য সশরীরে উপস্থিত হওয়া লাগবে না। কারণ পেনশনার ঘরে বসে অ্যাপে যুক্ত হলে বোঝা যাবে তিনি জীবিত আছেন। পেনশনারের ছবি সরাসরি দেখা যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাতের পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আগে পেনশন বাবদ বরাদ্দবিভক্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নানাভাবে রাখা হতো। মাসে মাসে পেনশনের টাকার জন্য এজি অফিস গিয়ে ধরণা দিতে হতো। এখন এ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখা হয়েছে। এ জন্য আলাদা একটি অফিস চালু করা হয়েছে। অনলাইনে পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে পেনশনের টাকা পেতে ভোগান্তি কমেছে সুবিধাভোগীদের।
চালু হচ্ছে কল সেন্টার : পেনশন সেবা আরও সহজীকরণের জন্য পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কার্যলয়ে কল সেন্টার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুলাই মাস থেকে পেনশনাররা যে কোনো ধরনের অভিযোগ, তথ্য বা সেবার জন ০৯৬০৯০০০৫৫৫ নাম্বারে ফোন করতে পারছেন। কলসেন্টার সেবাটি শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। এছাড়া পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কার্যালয়ে সরাসরি আগত পেনশনারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে একটি ডেডিকেটেড হেল্পডেষ্ক স্থাপন করা হয়েছে। পেনশনারা তাদের অভিযোগ, তথ্য অথবা সেবার জন্য সরাসরি হেল্পডেস্কে যোগাযোগ করতে পারেন।
পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিস প্রধান চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার (সিএএফও) মোহাম্মদ মমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, পেনশনারদের ভোগান্তি লাঘবসহ পেনশন প্রাপ্তি ও অন্যান্য সেবা প্রদানে পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিস নিরন্তর চেষ্টা করছে। পেনশনারদের সেবা সহজিকরণের বিষয়ে সিএজি, অর্থ সচিব, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক খোঁজ-খবর ও নির্দেশনা দেন। কাজের স্থচ্ছতাও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইনে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা (জিআরএস) পরিচালনা করছে। পেনশনারদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসের জনবল বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, বেসামরিক খাতের ৫ লাখ ৭৬ পেনশনারকে মোবাইল অ্যাপের সুবিধা দেওয়া হবে। পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নেওয়ার পদ্ধতি শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই থেকে বাধ্যতামূলক নিয়ম করা হয়, মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ তুলে নেওয়া যাবে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জমা রাখতে হবে। পেনশন সুবিধা আরও বাড়িয়েছে সরকার। অবসর নেওয়ার পর যেসব সরকারি চাকরিজীবী পুরো টাকা তুলেছিলেন, তারাও এখন মাসিক পেনশন পান। সঙ্গে বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট। অবসরের তারিখ থেকে ১৫ বছর পার হওয়া চাকরিজীবীদের এর আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্য সায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিকেও পেনশনযোগ্য করা হয়েছে। পুরো টাকা তুলে নেওয়া পেনশনাররা এখন অবসরে যাওয়ার ৮ বছর পরে এ সুবিধার আওতায় আসার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply