জাফর আহমদ
🕐 ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২১
print
চামড়া ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ
কোরবানির চামড়া নষ্ট রোধ করে সঠিক ব্যবস্থাপনা রোধে সমম্বিত কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে সরকার। এ কার্যক্রমের মধ্যে ব্যাংকে ৫৮৩ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে। এ জন্য ঈদের দিন থেকে ঈদের পর যে কয়দিন প্রয়োজন সে কয়দিন কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি কাজ করবে।
কোরবানির ঈদ এলেই চামড়া নিয়ে হুলস্থুল অবস্থা তৈরি হয়। মাঠ পর্যায়ে কাঁচা চামড়া বিক্রেতারা দাম পায় না, লবণের দাম বেড়ে যায়। চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যয় বেড়ে যায়। এতে হতাশার তৈরি হয়। চামড়া ব্যবস্থাপনা তৈরি হয় হ-য-ব-ল অবস্থা। এ জন্য এবার সরকার আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের সমন্বয় করবে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত কমপ্রেহেনসিভ মনিটরিং টিম। পর্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চামড়া সংরক্ষণে সারা দেশে নির্মাণ করা হবে ৬০০টি গুদাম।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান জানান, চামড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হলেই বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কমিটি কাজ করবে। প্রয়োজন মনে করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধান করে কমিটি হবে। এই কমিটি নিজ নিজ এলাকায় চামড়া নিয়ে সমস্যাগুলো দেখবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি বড় ধরনের সমস্যার সমাধান দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেলও সারা দেশের চামড়ার পরিস্থিতি খোঁজখবর রাখবে। যেখানে সমস্যা সেখানেই ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে সচিব কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।
ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ব্যাংকগুলোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবারও পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের তহবিল জোগান দেবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এগিয়ে এসেছে। তারা কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৫৮৩ কোটি টাকার জোগান দেবে।
চলতি বছর ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক আর বেসরকারির মধ্যে ইসলামী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি এবার ব্যবসায়ীদের জন্য ২২৭ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ রেখেছে। এরপর রয়েছে, জনতা ব্যাংক ১৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা।
আর বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আড়াই কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা এবং দি সিটি ব্যাংক ২০ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে বরাদ্দ রখেছে।
এর আগে গত বছর ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া কিনতে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্তসহ নয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। তবে ব্যবসায়ীরা বরাদ্দের বিপরীতে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন। গত বছর কাঁচা চামড়া কিনতে অগ্রণী ব্যাংক বরাদ্দ রেখেছিল ১৮০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ১৫৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৭১ কোটি, বেসিক ব্যাংক ৩ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত বছর বরাদ্দ রেখেছিল ৫০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৫০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।
করোনা মহামারীর মধ্যে কাঁচা চামড়া নিয়ে নতুন কোনো ইস্যু তৈরি না হয় এ জন্য সরকার আগে থেকেই সরকারের দফতরগুলোকে এ প্রস্তুতি দিতে বলেছে। প্রতি বছর বিপুল চামড়া নষ্ট হওয়া এবং প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আর্থিক লোকসানের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রণীত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কোরবানির আগেই চালু হবে কাঁচা চামড়ার ‘হাব’ হিসেবে খ্যাত দেশের চার জেলায় মডেল সংরক্ষণাগার (গুদাম)। কাঁচা চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চামড়া নির্ধারিত মূল্যে বেচাকেনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুদে জোর দেওয়া হবে। পাশাপাশি পশু জবাই করার সঙ্গে সঙ্গে চামড়া ঢাকামুখী করার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
প্রতি বছর এক কোটি ২৫ লাখ পশু কোরবানি করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ চামড়া দুদিনের মধ্যে তৈরি হয়। এ কারণে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাতে সতর্ক অবলম্বন করতে হয়। এবারের কোরবানির ঈদ পুরোপুরি করোনা সংকটের কারণে হওয়ার কারণে চামড়া নিয়ে আরও সতকর্তা জরুরি। একদিকে রপ্তানি কমে গেছে বলে চামড়া কেনার আগ্রহ কম দেখানো অন্যদিকে মহামারীর মধ্যে যোগযোগ সমস্যার কারণে সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সমস্যা। তবে সরকার ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুন লকডাউন শিথিল করার কারণে চামড়া সংগ্রহে সমস্যা কিছুটা দূর হতে পারে।
এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেছেন, করোনার কারণে রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। আর চামড়া জাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২১ শতাংশ। তবে আশার কথা টিকা এসে যাওয়ার কারণে আবার পর্যটন ট্যুরিজম ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে; চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমিত হয়ে আসছে এবং চীনের চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো চীন ছাড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশে চামড়া নিয়ে খুব সমস্যা হওয়ার নেই। এই কোরবানিতেই তার প্রভাব পড়বে।
Leave a Reply