অনলাইন ডেস্ক : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গবাদিপশু বিক্রয়ের জন্য হাটে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট দেখছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আক্রান্তের ঝুঁকি আর চাঁদাবাজির ভয়ে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন গবাদিপশু পরিবহনে সব ধরনের ভয় ও ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এবারই প্রথম দেশে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কোরবানির ঈদ আসছে। গত বছর করোনার মধ্যে ঈদ হলেও কোরবানির সময় করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছিল। লকডাউন শিথিল ছিল বেশ সময় ধরে। তাছাড়া করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু সর্বোচ্চ থাকা আর করোনা মৃত্যু-আক্রান্ত গ্রামকেন্দ্রিক প্রকট হওয়ায় সংকটের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে যে সব অঞ্চলে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সেই সব জেলা দেশের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে গবাদিপশু বেশি রয়েছে। বছর ধরে এ সব অঞ্চলে খামারিরা পশু পালন করেছেন। তারা ঈদের অপেক্ষায় ছিলেন, যে কোনোভাবেই হোক তারা পশু বাজারে তুলবেন। দেরিতে হলেও কঠোর লকডাউন শিথিল করার কারণে খামারি ও ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি কিছুটা থাকছেই।
কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির জন্য পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি সবচেয়ে বড় সমস্যা। এক জেলা থেকে অন্য জেলা, এক জোন থেকে আরেক জোনে গরু বোঝাই করে যাওয়ার পরপরই নতুন নতুন চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। একে তো করোনার মধ্যে বাজারকাল হবে সংক্ষিপ্ত। তার সঙ্গে থাকবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এর সঙ্গে চাঁদাবাজি যুক্ত হলে খামারি ও ব্যবসায়ীরা পড়বেন বিপদে। তবে প্রশাসন সক্রিয় হলে সমস্যা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে গাবতলীর গরু ব্যবসায়ী এস্কান্দার আলী খোলা কাগজকে বলেন, নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোরবানির পশু পরিবহনের খুব ভালো ফল পেয়েছিল নাটোরের ব্যবসায়ীরা। পুলিশের তদারকিতে নাটোর থেকে অন্যান্য জেলায় গরু নিয়ে গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। এতে চাঁদা কম দিতে হয়েছে। পাশাপাশি ডাকাতি হওয়ার ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পেয়েছে। মৌসুমি ফল পরিবহনের ক্ষেত্রে এ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নাটোর জেলা পুলিশ। রাজশাহীসহ উত্তরের অন্যান্য জেলা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলা ও রাজধানীতে অন্য যে সব জেলায় গরু আসে সে সব জেলায় এ ধরনের পুলিশ প্রহরার দাবি জানিয়েছেন এই গরু ব্যবসায়ী।
এবার সারা দেশে কোরবানির জন্য ১ কোটি ১৯ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সব পশু যাতে বিক্রি হয় সরকারের পক্ষ থেকে যত সহযোগিতা প্রয়োজন দেওয়া হবে। এ জন্য প্রশাসনকে সেভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাস্তায় বা পশুর হাটে কোনো চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। কোরবানির পশু পরিবহন ও বাজারে তোলার প্রক্রিয়ায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আশ^স্ত করছে। তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আপনাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম আশা করি। আমাদের কাজের জায়গা কোনোভাবেই স্থবির করা যাবে না। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কাজ করতে হবে। কোরবানি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি নিতে হবে। বাজারে যাতে অসুস্থ বা রুগ্ন পশু বিক্রয় না হয়, সে বিষয়ে ভেটেরিনারি সার্জনরা কাজ করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান জানান, কোনবানির পশু পরিবহন, কেনা-বেচা, জবাই ও চামড়া ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবার সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে কমিটি কাজ করবে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সচিবের নেতৃত্বে থাকবে কমিটি। এছাড়া পশু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবহনের ক্ষেত্রে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, পালন বিক্রি ও কোরবানির পর শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করবে।
কোরবানির পশুর হাট, পরিবহন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যতই আশার কথা শোনাক না কেন, লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দেরিতে আসার কারণে ইতোমধ্যে খামারি, প্রান্তিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে আশায় বালি পড়েছে, যে সর্বনাশ হওয়ার কথা তা হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে তারা নিজেরা ঢাকা বা অন্যান্য জেলাগুলোতে পশু নিয়ে যায়। বিশেষ করে পশ্চিম ও উত্তরের জেলাগুলোতে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আর এ সব জেলাতেই বেশি পশু পালন হয়। কঠোর লকডাউনের কারণে এ সব জেলার খামারিদের ওপর প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে তারা কম দামে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে পশু বিক্রি করে ফেলেছেন। তারা করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিতে চাননি। ১৬ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল হবে- এ ঘোষণা আরও খানিক আগে এলে খামারিদের ক্ষতি কম হতো। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মানুষের কাছে পশু পৌঁছে দিলেও সুষ্ঠুভাবে পারবে কি-না, সেই সংশয় রয়েই যাচ্ছে। গাবতলীর গরু ব্যবসায়ী এস্কান্দার এমনটাই মনে করছেন।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply