অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে কুরবানির পশু। আগামীকাল শনিবার থেকে নগরীর ১৮টি হাটেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বেচাকেনা। ইতিমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নেওয়া হাট কর্তৃপক্ষ পশু কেনাবেচার সার্বিক প্রস্তুতিও নিয়েছে। হাটের সীমানা নির্ধারণ ছাড়াও পশু বাঁধার বাঁশের খুঁটি পুঁতে তৈরি করা হয়েছে সারি সারি পশু রাখার লাইন। অবশ্য কিছু হাটে কুরবানির পশু আসলেও শুরু হয়নি বেচাকেনা। তবে অনেকেই এখন হাটে আসছেন শুধু দেখার জন্য। আশা করা হচ্ছে কাল থেকে হাটের পরিবেশও পাল্টে যাবে। দিন যতই গড়াবে প্রত্যেক হাটে বাড়তে থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি। আগামী বুধবার ঈদ। এর দু’দিন আগেই মূলত জমে ওঠে কুরবানির পশু কেনাবেচা।
এদিকে দীর্ঘ ১৪ দিন কঠোর লকডাউনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিনে রাজধানীর প্রবেশ মুখে এবং অন্যান্য মহাসড়কে যাত্রীদের পাশাপাশি পশুবাহিত ট্রাককেও যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে খামারিদের পালিত পশু আসছে রাজধানীতে। খামারিরা আশা করছেন, দেশের বাইরে থেকে এ বছর পশু আসা বন্ধ থাকলে আশানুরূপ লাভ করতে পারবেন তারা।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগেই রাজধানী ঢাকায় ১৮টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আটটি হাট বসছে। আগামীকাল শনিবার থেকে এসব হাটে পশু কেনাবেচা শুরু হবে।
কুরবানির পশুর হাট ও পশু কেনাবেচার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ইতিমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সারা দেশে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। খামারি ও ক্রেতাসাধারণকে কুরবানির পশু অনলাইনে ক্রয়বিক্রয়ের উৎসাহিত ও অনুরোধ করা হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে হাটে জনসমাগত এড়াতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে উত্তর সিটি এবারও ডিজিটাল পশুর হাট চালু রেখেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাট বসানো হলেও অনলাইন হাটকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, ১৭ থেকে ২১ জুলাই (ঈদের দিন) পর্যন্ত নগরীর ১৮টি হাটে পশু বিক্রি করা যাবে। এর বাইরে উত্তর সিটি এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটেও কুরবানির পশু বেচাকেনা চলবে। দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
করোনার কারণে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অস্থায়ী হাটের ইজারাদারদের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারা বাতিল করা হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে প্রথম দিকে ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা তিনটি হাট বাতিল করে এখন ১০টি জায়গায় অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী হাটগুলো হলো হাজারীবাগ এলাকার ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২-এর খালি জায়গা, গোলাপবাগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের যে নয়টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলো হলো বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসানো হবে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন কয়েকটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। হাটে প্রবেশকারীকে গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
এ ছাড়া হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট করতে হবে। নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ-বের হতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই বিষয়টি ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply