অনলাইন ডেস্ক : শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রজাপতি প্রেমে পড়েনি এমন কেউই হয়তো নেই! এ যেন প্রকৃতির এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য। লাল-নীল বাহারি রঙের পাখার জাদুতে মুগ্ধ করে সবাইকে। এই রূপে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রজাপতি প্রজাপতি, প্রজাপতি- কোথায় পেলে ভাই এমনও রঙিন পাখা। টুকটুকে লাল-নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।’
পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। বাংলাদেশে যার সংখ্যা মাত্র ৩০০। প্রজাপতির জন্য বিশ্বের আছে বিশেষ পার্ক। এর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্ক ‘বাটারফ্লাই ওয়ার্ল্ড’ আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ না থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি রোডে প্রায় ছয় একর জমির ওপর অবস্থিত একটি প্রজাপতি পার্ক আছে। এবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তানজিম পল্লীতে প্রায় পাঁচ একর জমির মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে আরেকটি প্রজাপতি পার্ক। যার উদ্যোক্তা মুনসুর নগর ইউনিয়নের ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসমত আলী।
সরেজমিন দেখা যায়, তার এই পার্কে প্রায় ৩০ প্রজাতির কয়েকশত প্রজাপতি আছে। যাদের সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থ এবং ২০ ফুট উচ্চতার একটি নেট দিয়ে ঘেরা আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। লাল-নীল বাহারি রঙের এসব প্রজাপতি দেখতে বহু দূর-দুরান্ত থেকে ভিড় করেছেন দর্শনার্থী। জেলার ইসলামপুর থেকে আসা জয়নাল হোসেন জানান, এখানে অনেক রকমের প্রজাপতি পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১
মুখরিত প্রজাপতি পার্ক
দেখে খুব ভালো লাগছে। আরেক দর্শনার্থী ইসরাত জাহান বলেন, বাচ্চারা প্রজাপতি খুব পছন্দ করে, তাই ওদের নিয়ে বেড়াতে এলাম।
এই পার্কে শুধু প্রজাপতিই নয়, রয়েছে প্রজাপতির পছন্দের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা যেমন- রঙ্গন, মুসেন্ডা, নয়ন তারা, মাধবীলতা, কামিনী, কসমস, লজ্জাবতী, কদম আছে। সেই সঙ্গে এরিকা পাম লিচু, ঝুমকোলতা, আশশেওড়া, ল্যান্টেনা, কলকাসুন্দা, লেবু, গাঁদাফুল, ভেরেন্টা, আমগাছ, আঙ্গুর লতাসহ অর্ধশতাধিক গাছপালা।
উদ্যোক্তা হাসমত আলী জানান, তার বসতভিটা সংলগ্ন একটি ফুলের বাগান ছিল। সেখানে থাকা দোলনায় মাঝে মাঝেই তিনি বসে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। আর সে সময়ই দেখতেন প্রজাপতি এসে ভিড় করছে। তিনি বলেন, তখন আমি তন্ময় হয়ে দেখতাম আর ভাবতাম প্রজাপতিগুলো যদি সবসময়ের জন্য এখানে রাখতে পারতাম। এ চিন্তা থেকেই প্রজাপতির জীবনাচরণ সম্পর্কে ধারণা নিতে গিয়ে জানতে পারলাম, পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। বাংলাদেশে যার সংখ্যা মাত্র ৩০০। যাদের সংরক্ষণ ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য আছে পার্ক। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম বসতভিটায় আমিও একটি প্রজাপতি পার্ক তৈরি করব।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রজাপতি প্রথমে ডিম দেয়, ডিম দেওয়ার পরে লার্ভা থেকে পিউপা এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হয়। যত্রতত্র কীটনাশকের ব্যবহার ও অবাধ বিচরণে বাধা প্রদান করায় এদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট এবং প্রজাপতি মারাও যাচ্ছে। তিনি হাসমত আলীর উদ্যোগে খুশি হয়ে বলেন, তিনি প্রজাপতির বিচরণ এবং বংশ বৃদ্ধির জন্য যে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন, তা প্রজাপতির বংশ বৃদ্ধির সহায়ক হবে। ফুল ফসলের পরাগায়ণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তার সব ধরনের সহযোগিতায় কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করবে।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply