স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) জেলা-উপজেলা কার্যালয়গুলোতে বদলিতে অনীহা এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর। তাদের পছন্দ বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়। ফলে অর্ধ্বশত কর্মকর্তা-কর্মচারী একই কর্মস্থল বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়, রাজশাহীতে যুগ পার করছেন। এতে তাদের একটি অংশ অবৈধ সি-িকেটে জড়িয়ে পড়েছেন।

সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পদের অন্তত অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী নূন্যতম দেড় যুগ ধরে প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে কেউ ১০ বছর, কেউ কেউ ১২ বছর, আবার কেউ দেড় যুগ পার করেছেন। এতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবল প্রধান কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করায় প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যত্যয় ঘটছে। এছাড়া সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে সর্বোচ্চ ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। কিন্তু সেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যত্র বদলি হন না। দীর্ঘকাল প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করায় তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া সাত কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে ও দুর্নীতির প্রমাণ সংবলিত সব নথি জব্দ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএ প্রধান কার্যালয়ে অবস্থানরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ সর্বশেষ গত প্রায় ৫ বছর বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। পরে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে স্বপদে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে। তিনি ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিএমডিএ’তে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর প্রায় বছরখানেক আগে সেখানে যুগ্ম সচিব শ্যাম কিশোর রায় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু তিনিও এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো পুরোপুরি আস্থা ফেরাতে সমর্থ হননি।

বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাশেম এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হুদা প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে এক যুগ ধরে চাকরি করছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীদের মধ্যে শিব্বির আহমেদ প্রধান কার্যালয়ে রয়েছেন ২০ বছর। তিনি একটি প্রকল্পের পিডি। ২০ বছর রয়েছেন আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম মাহফুজুর রহমান। আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী রুবিনা খাতুন রয়েছেন ১৫ বছর। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী ও সচিব ইকবাল হোসেন ১৫ বছর থেকে রয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুর রহমান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম ১০ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।

বহুল আলোচিত সহকারী প্রকৌশলী সানজিদা খানম মলি প্রধান কার্যালয়ে রয়েছেন ১০ বছর ধরে। তিনি অবৈধ সি-িকেটের অন্যতম সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান ১৫ বছর ধরে রয়েছেন প্রধান কার্যালয়ে। জেষ্ঠতা লংঘন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা পদে আসীন করা হয় এবং তিনিও অবৈধ সি-িকেটে অন্যতম সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে। সহকারী হিসাবরক্ষক রবিউল ইসলাম রয়েছেন ১০ বছর। আরেক সহকারী হিসাবরক্ষক শাহ জামান ২০ বছর থেকে প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করছেন। সহকারী কোষাধ্যক্ষ আবদুর রাকিব রয়েছেন ১০ বছর। প্রধান সহকারী ওয়াজেদ আলী রয়েছেন প্রায় ১৫ বছর। এছাড়া আরও অনেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী প্রধান কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় থেকে চাকরি করছেন। অদৃশ্য কারণে এদের বদলি করা হয় না। বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিরোর রায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করার ব্যাপারে কতটুকু আন্তরিক তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এতে করে বিএমডিএর অভ্যন্তরে একটি অবৈধ সি-িকেট দীর্ঘকাল ধরে আধিপত্য বজায় রেখেছে। এই সি-িকেটের বলয় থেকে বের হতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, সরকারি এই স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির কোনো অগ্রানোগ্রাম এখনো তৈরি হয়নি। অর্থাৎ পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত যে বেতন কাঠামো ও অগ্রানোগ্রাম রয়েছে সরকারিভাবে তার কোনো অনুমোদন নেই।

এসব ব্যাপারে জানতে মোবাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিশোর রায়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে তিনি দায়িত্বগ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে সরাসরি ও মুঠো ফোনে গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাক্ষাত দেননি এবং কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি।

এছাড়া মোবাইলে বিএমডিএর সচিব ইকবাল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি। আবার মোবাইল কল কেটেও দিয়েছেন। ফলে তার বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।

বাংলার বিবেক ডট কম – ১২ নভেম্বর, ২০২০