অনলাইন ডেস্ক : জামদানির শাড়ি তৈরীর ইতিহাস এদেশে কয়েকশ বছরের। এক সময়ের জনপ্রিয় আর অনেকটা আশ্চর্য শিল্প মিহি মসলিন কাপড়ের আবাসস্থল ছিলো এ দেশে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তাঁতিরা ছিলো সে কাজে জড়িত। আর বর্তমানে এর উত্তরাধীকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি তৈরীর আতুরঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি পল্লী।
সূত্র জানায়, এখানে এমন পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫ হাজার তাঁতি। গত দুই বছর করোনার কারণে জামদানি শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ্য হলেও এবার ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ঘুরে দাড়াচ্ছে এখানকার জামদানি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের ব্যবসা চাঙ্গা করতে হাটের উপর এতোদিন ভরসা থাকলেও এবার ই কমার্সে পাচ্ছে সফলতা। তবে শ্রমিকদের প্রাপ্ত মুজুরী নিয়ে রয়েছে চরম ক্ষোভ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লীতে সরাসরি ক্রেতা থেকে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা।
দেখা যায়, পল্লীর প্রতিটি ঘরে চলছে জামদানি শাড়ি তৈরীর কাজ। নানা বাহারী ডিজাইনের মাধ্যমে মনের মাধুরি মিশিয়ে তাঁতিরা তৈরী করছে জামদানি শাড়ি। ঘরে ঘরে জামদানি শাড়ী তৈরীর হাত কলের খটখট শব্দে ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে। এদিকে সুনশান চিত্র দেখা জামদানি পল্লীর ভেতরের দোকান গুলোতে। জামদানির পল্লীর ভেতরে প্রায় ১২ টি জামদানির বিক্রি শোরুম রয়েছে। প্রতি বছর শোরুম গুলোতে পাইকারী ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এ বছর খুব বেশি ক্রেতা দেখা যায়নি। তবে পল্লীতে সরাসরি পল্লীতে ক্রেতারা না আসলেও অনলাইনে জামদানি খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। করোনার পরিস্থিতি জামদানির বাজার দখল করে নিয়েছে ই-কমার্স।
তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ও লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ৫ হাজার তাঁতি। লকডাউন ও করোনা থেকে ঘুরে দাড়াতে তাঁতিরা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জামদানি শাড়ি বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। বর্তমানে পল্লীর তাঁতি ও দোকান মালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই পেইজ রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সেই পেইজের মাধ্যমেই তারা শাড়ি বিক্রি করে চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ই-কমার্সে বেশ সারাও পাচ্ছে তাঁতিরা। জামদানি শাড়ির আধুনিকায়ন ও তাঁতীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে জামদানি পল্লীতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের পাশাপাশি তারা তাদের তৈরীরকৃত শাড়ি বিক্রি করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ই-কমার্সে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল তৈরী ও অথবা পেইজ খুলে নিজেদের তৈরী শাড়ির ছবি আপলোড করে মূল্য লিখে দিচ্ছেন। যাদের পছন্দ হচ্ছে অগ্রীম কিছু টাকা দিয়েশাড়ি হাতের পাওয়ার পর বাকী টাকা দিচ্ছেন। তাঁতিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাড়ির অর্ডার পান। শাড়িগুলো বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। জামদানি পল্লীতে প্রায় অর্ধশত তাঁতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে নিজেদের তৈরী জামদারি শাড়ি তৈরী করছে। এছাড়া তাঁতিদের কাছ থেকে জামদানি কিনে অনেক যুবক অনলাইনে বিক্রি করেও বেশ লাভবান হচ্ছে।
সাবরিনা জামদানীর মালিক সাবরিনা রহমান বলেন, গত ১২ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি। তবে অনলাইনে অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পেজ খুলে তা থেকে ভালো সারা পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, তার মতো বেশিরভাগই তাঁতিই এখন অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
কথা হয় শরীফা জামদানির মালিক নাসরিন আক্তারের সঙ্গে, তিনি জানান, দোকানের পাশাপাশি নিজ দোকানের নামে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পেইজ রয়েছে। বর্তমানে দোকানে বিক্রি অনেক কমে গেলেও ঈদকে সামনে রেখে অনলাইনে শাড়ি খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। এখন জামদানি পল্লীতে সরাসরি আসে না অনলাইনে শাড়ির ডিজাইন পছন্দ করলে তারা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয়।
তবে তাঁত কারিগরদের অভিযোগ, জামদানি শাড়ির বিক্রি বাড়লেও বাড়েনি তাদের মজুরি। তারা আগে যে পরিমাণ মজুরী পেত বিক্রি ও শাড়ি দাম বাড়লেও তাদের তাতঁকল মালিকরা তাদের মজুরি বাড়াননি। মজুরি না বাড়ার কারণে অনেক তাতঁ কারিগর পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। নিত্ত্য প্রয়োজনী পন্যে দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে এই মজুরীতে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে। তাই তাদের বেতন না বাড়ালে তাঁত কারিগরের অভাবে এ পেশা বিলীন হয়ে যাবে এক সময়।
স্থানীয় কারিগর মোতালিব মিয়া বলেন, জামদানী শাড়ী তৈরীতে ধৈর্য্যসহ দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। দেখা যায় ৩০ হাজার টাকার একটি শাড়ী তৈরী করতে ৬০ দিন লেগে যায়। তাহলে একটি শাড়ীতে মুজুরী বেড়ে যায়৷ উৎপাদন ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য জামদানীতে টিকে থাকা কষ্টকর হবে। কারন কাপড়ে সুক্ষ্ম ডিজাইন করতে সময় ব্যয় হয় কিন্তু সময়ের মুজুরী দেয় না মালিকরা।
এ ব্যাপারে তাতঁকল মালিকদের দাবি, সুতার দাম বাড়ার কারণে শাড়ি বিক্রি বেশি হলেও তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। তাই কারিগরদের মজুরীও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। তারপরও শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে মালিকরাও চিন্তিত।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply