রাজশাহী প্রতিনিধি : স্থানীয় কতিপয় রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় মাদকের গডফাদারে হয়ে উঠেছেন মো: মুক্তার ওরফে মুক্তা।
তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী চারঘাটের বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব স্পটে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক কেনাবেচা হয়।
মুক্তা চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামের মো: শাইদুর রহমান আঞ্জুর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলাসহ মাদকের অন্তত ১৬ টি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় ওয়ারেন্টও রয়েছে। তারপরেও বহাল তবিয়তে মুক্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ডিবি ও চারঘাট থানার কতিপয় পুলিশের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। মুক্তা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পায়না। আবার কখনো পুলিশ অভিযানে গেলেও কিছু সময়ের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকে। পুলিশ চলে গেলে আবার শুরু হয় তার মাদক কারবারের ব্যবসা।
তারা আরও বলেন, মুক্তা একসময় মাটির বাড়িতে বসবাস করত। মাদকের ব্যবসা করে হয়েছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বর্তমানে রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকায় তার নিজ নামে দুই বিঘা জমি, নিজ এলাকায় ছাদ দেয়া বাড়ি রয়েছে। গত চার মাস পূর্বে এলাকায় দুই বিঘা জমি কিনেছে মুক্তা। এছাড়া চামটা জাঙ্গাল বিলে ৩টি পুকুর, ঘোষপাড়ায় একটি, ফতেপুর এলাকায় একটি পুকুর রয়েছে তার। মাদক বহন কাজে চারটি চোরাই মোটরসাইকেল রয়েছে। পালসার, গ্লামার, আরটিআর ও ১০০ সিসি বাজাজ মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মুক্তা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে মাদক কারবারীদের একটি তালিকা রয়েছে। এতে এই তালিকার মধ্যে মুক্তার নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকের আগ্রাসন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু দু’একজন বহনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না।
সূত্র মতে, চারঘাটের হলিদাগাছি এলাকায় মোছা: রঙ্গিলা নামে এক নারী মাদক কারবারী অনেকটা প্রকাশ্যেই হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রঙ্গিলার স্বামীর নাম শহিদুল ইসলাম। একই এলাকায় বরকত ও তার স্ত্রী এবং রসনি বেগম নামে অনেক নারীও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। হলিদাগাছী তালপট্টি এলাকায় মাদকের স্পট চালায় আনারের ছেলে আমিন এবং একই এলাকার জিয়ারুল ও রিপন।
সূত্র বলছে, মুক্তা মাদকের বড় বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে মাদক বিরোধী অভিযান চললেও মুক্তা থাকে নিরাপদ। তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ থাকার পরেও দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মুক্তা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। তার ভয়ে এলাকার কেউই মুখ খুলতে সাহস পান না।
এ বিষয়ে চারঘাট থানার ওয়ারেন্ট অফিসার মাজেদ আলী মাদক কারবারী মুক্তার বিরুদ্ধে একটি সাজা ওয়ারেন্ট আছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম নিশ্চিত করে বলেন, মুক্তা একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন থেকে পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করছে। এছাড়া একটা আসামীর জন্য এত সময় নেই আমাদের হাতে। এর আগে তাকে আটক করা হয়েছিলো কিন্তু পুলিশকে আহত করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় মুক্তা বলেও জানান তিনি।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১৮ জানুয়ারী ২০২১
Leave a Reply