অনলাইন ডেস্ক : কোভিড-১৯ পুরুষের শুক্রাণুর মানের ওপর প্রভাব ফেলে এবং প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সম্প্রতি নতুন এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। বৃহস্পতিবার রিপ্রডাকশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এমনটি জানা যায়।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘সর্বশেষ প্রকাশিত এই প্রতিবেদন সরাসরি প্রমাণ সরবরাহ করে যে, কোভিড-১৯ বীর্যের গুণগত মান হ্রাস এবং পুরুষের প্রজনন সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে।’
তবে গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিবেদনের ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের দ্যা ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের অ্যান্ড্রোলজির অধ্যাপক এলান পেসি বলেন, ‘তারা এ রিপোর্টের মধ্য দিয়ে যে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন, তার প্রতি সতর্ক হবার আহ্বান জানাব আমি। যেমন, এই সমীক্ষার লেখকবৃন্দ দাবি করছেন, তাদের প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পুরুষের প্রজননতন্ত্রে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তবে এটি শুধুই একটি সংস্থার ভাষ্য।’
‘যে কোনো ভাইরাসের আক্রমণেই আপনার শুক্রাণু উৎপাদনক্ষমতা কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এটি একেবারে সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক একটি উপসর্গ। ফলে তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, এর কতটুকু কোভিডে আক্রান্তের ফলে কমেছে এবং কতটুকু সাধারণ অসুস্থতার হেতু, সেটি স্পষ্ট নয়,’ এ মন্তব্য করেন ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড এন্ড্রোলজির কনসালট্যান্ট ডা চান্না জায়াসেনা।
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির ফার্টিলিটি সেন্টারের প্রধান এলিসন মারডক ইমেইল বার্তায় জানান, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা ভুলবেন না, বীর্যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায়নি। এমনকি বীর্যের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়াতে পারে- এমন কোনো তথ্যও এখন অব্দি প্রমাণিত হয়নি।’
কোভিড-১৯-কে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণার আগে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান মারডক।
এদিকে, ভাইরাসে সংক্রমিত হননি- এমন ১০৫ জন প্রজননক্ষম পুরুষ এবং সংক্রমিত ৮৪ জন পুরুষের ওপর এ সমীক্ষা পরিচালিত হয়। ১০ দিন অন্তর অন্তর পুরো দুই মাস তাদের বীর্যের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হননি, এমন মানুষের চেয়ে ভাইরাস আক্রান্তদের শুক্রাণুর কোষে উল্লেখযোগ্যহারে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে আসে। তাদের শুক্রাণুর ঘনত্ব, গতিশীলতা এবং আকারও ভাইরাসের কারণে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।
সমীক্ষাটি আরও উল্লেখ করে, রোগের তীব্রতার সঙ্গে পার্থক্যগুলোও সুস্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
জার্মানির লাইবিগ ইউনিভার্সিটি গিজেনের ডক্টরাল শিক্ষার্থী বেহজাদ হাজিজাদেহ মালেকি বলেন, ‘শুক্রাণুর ওপর এই প্রভাব শুক্রাণুর মান ও প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পাবে, তবু কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে এর হার উল্লেখযোগ্য এবং অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ।’
এমনকি কোভিড আক্রান্ত রোগীর দেহে উচ্চমাত্রার এসিইটু (ACE2) এনজাইমও পাওয়া গেছে বলে সমীক্ষাটি জানায়। প্রোটিন জাতীয় এই এনজাইমের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে তা শরীর থেকে করোনাভাইরাসকে সহজে নির্মূল হতে দেয় না এবং দেহের বিস্তৃত অংশের কোষকে সংক্রমিত করে। সূত্র: সিএনএন
বাংলার বিবেক ডট কম – ২৯ জানুয়ারি, ২০২১
Leave a Reply