অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন ময়না বেগম (৩৫)। তিনি যখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তাকে ফেলে চলে যান স্বামী জামাল মিয়া। এরপর আর কোনো খোঁজ নেননি স্ত্রীর। প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই চিন্তা বাড়তে থাকে তার। এমন পরিস্থিতিতে মাসখানেক আগে বাগেরহাটের শরণখোলা উত্তর রাজাপুর গ্রামে ভিক্ষুক মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন ময়না বেগম।
গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে প্রসব ব্যথা উঠলে ময়না বেগমকে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায় তার পরিবার। রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্বাভাবিকভাবেই তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। মা সুস্থ আছেন। সুস্থ আছে নবজাতকরাও। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন কম হওয়ায় মাসহ তিন নবজাতকে উন্নত সেবার জন্য দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে তিন সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দরিদ্র পোশাক শ্রমিক ময়না বেগম। নবজাতকদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও নিজের চিকিৎসার খরচ জোগান দেওয়ার মতো তেমন কোনো অবলম্বন নেই তার। বাবা সায়েদ তালুকদার মারা গেছেন কয়েক মাস আগে। বিধবা মা পিয়ারা বেগম (৫৫) মানুষের বাড়িতে ভিক্ষা করে সংসার চালান। স্বামী ফেলে যাওয়ায় সেই ভিক্ষুক মায়ের কাঁধেই এখন বোঝা হয়েছেন ময়না বেগম।
ময়না বেগম জানান, চার বছর আগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকার জামাল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। জামাল মিয়া তার দ্বিতীয় স্বামী। আগের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের ছোট একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি যখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন স্বামী তাকে ফেলে চলে যান। সেই থেকে আর খোঁজ নেননি।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একজন মা তিনটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাচ্চারা সুস্থ আছে। মায়ের বুকের দুধ পান করছে তারা। তবে একসঙ্গে তিনটি বাচ্চা হওয়ায় ওজন কম হয়েছে। বাচ্চারা পরবর্তীতে যাতে কোনো ধরনের ইনফেকশন আক্রান্ত না হয়, সে জন্য তাদেরকে উন্নত সেবার জন্য খুলনা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’
Leave a Reply