অনলাইন ডেস্ক : বর্ষপূরণ নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে একটা আলাদা উত্তেজনা থাকে। নতুন জামা, পছন্দের খেলনা, খাবার এবং অনেক উপহার পেয়ে থাকে বাচ্চারা। ক্রিমে ডুবে থাকা সেই কেক থেকে যদি উঁকি মারে কোনও নিরীহ শিশুমুখ যার আপাদমস্তক যেন বরফে ঢাকা। যে কোনও বাচ্চাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। ১৯ শতকে নতুন বছরের উত্সবে এটাই ছিল বাচ্চাদের কাছে সেরা উপহার।
বরফে ঢাকা নিরীহ শিশুমুখের ওই পুতুলের নাম ফ্রোজেন শার্লট। ১৯ শতকে জার্মানিতে বাচ্চা এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এই পুতুল। শিশুদের মনে খুশিতে ভরিয়ে দেওয়া এই ফ্রোজেন শার্লটের পিছনে কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে মর্মান্তিক কাহিনি। এই পুতুলের উত্পত্তি হয়েছে আসলে একটি কবিতা অবলম্বনে। আর সেই কবিতা সৃষ্টি হয়েছিল একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
১৮৪৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সেবা স্মিথ নামে এক সাংবাদিক ‘দ্য রোভার’ নামে এক সংবাদপত্রের হয়ে কাজ করতেন। তাঁর লেখা একটি কবিতা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতার নাম ছিল ‘এ কর্পস গোয়িং টু এ বল’। শার্লট নামে এক শিশুই ছিল কবিতার প্রধান চরিত্র। নতুন বছর উদযাপন করতে যাওয়ার সময় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল তার। ঠান্ডায় জমে মারা গিয়েছিল শার্লট।
কবিতা অনুসারে, শার্লট স্লেজ গাড়িতে চড়ে তার বন্ধু চার্লির কাছে যাচ্ছিল। দু’জনে একসঙ্গে নতুন বছর উদযাপন করার পরিকল্পনা করেছিল। বাইরে তখন কনকনে ঠান্ডা। মা তাকে বারবারই গরম পোশাক পরে বাইরে বার হতে বলেছিলেন। কিন্তু নতুন পোশাক চাপা পড়ে যাবে বলে মায়ের কথা শোনেনি অবাধ্য শার্লট। গরম জামা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছিল সে। বন্ধু শার্লটের কাছে পৌঁছনোর আগেই হাড়কাঁপুনি ঠান্ডায় জমে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। বন্ধু চার্লির কাছে যখন স্লেজ গাড়ি পৌঁছেছিল তাতে দাঁড়িয়ে ছিল শার্লট। তার সারা শরীর বরফে ঢাকা ছিল। শার্লটকে এমন অবস্থায় দেখে তখনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় চার্লিরও।
এটাই ছিল কবিতার বিষয়বস্তু। জানা যায়, ১৮৪০ সালে জার্মানির এক সংবাদপত্রে এমনই একটা ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল। সাংবাদিক স্মিথের কবিতা ১৮৪০ সালের ওই সত্য ঘটনা অবলম্বনেই লেখা হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র কবিতা থেকেই ফ্রোজেন শার্লট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কবিতা প্রকাশের পর ১৮৬০ সাল নাগাদ জার্মানির গলিতে গলিতে পৌঁছে যায় ফ্রোজেন শার্লটের কাহিনি। যখন এই কবিতাতেই সুর বাঁধেন গায়ক উইলিয়াম লরেঞ্জো কার্টার।
তাঁর গানের জনপ্রিয়তার সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফ্রোজেন শার্লটও। শিশুদের কাছে এই পুতুল শুধুমাত্র খেলনা ছিল। কিন্তু অভিভাবকদের কাছে ছিল বার্তাবহ। বাবা-মা সন্তানকে এই পুতুল দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বার্তা দিতে চাইতেন যাতে তারা শার্লটের মতো অবাধ্য না হয়ে ওঠে।
তাঁর গানের জনপ্রিয়তার সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফ্রোজেন শার্লটও। শিশুদের কাছে এই পুতুল শুধুমাত্র খেলনা ছিল। কিন্তু অভিভাবকদের কাছে ছিল বার্তাবহ। বাবা-মা সন্তানকে এই পুতুল দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বার্তা দিতে চাইতেন যাতে তারা শার্লটের মতো অবাধ্য না হয়ে ওঠে।
প্রথম প্রথম পোর্সেলিন দিয়ে তৈরি করা হত পুতুলগুলো। আকারে সেগুলি খুব ছোট হত যাতে শিশুরা সহজেই হাতে ধরতে পারে। ফ্রোজেন শার্লট বিক্রি হত ছোট বাক্সের মধ্যে। শার্লটের সারা শরীর সাদা রঙের শুধুমাত্র চোখ আর চুল ছিল কালো। পরে পরে ছেলেদের জন্যও চার্লি পুতুল বানানো শুরু হয়েছিল জার্মানিতে। এবং ফ্রোজেন শার্লট রীতিমতো জার্মানির ফ্যাশনেও জায়গা করে নিয়েছিল। অনেকেই হারের লকেট হিসাবে পরতে শুরু করেছিলেন।
বাংলার বিবেক ডট কম – ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Leave a Reply