স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আব্দুর শুক্কুর ও তার স্ত্রী শেফালী’কে দীর্ঘ ১৩ বছর পলাতক থাকার পর নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ মডেল থানা এলাকায় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কয়ৈতা বেগম শেফালী (৪৫), স্বামী  ও আব্দুর শুক্কুর (৫০), তাদের উভয়ের ঠিকানা চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার মালুরা গ্রামের ইসলাম ভূইয়ার ছেলে। তারা স্বামী-স্ত্রী।

শুক্রবার র‌্যাব-৭, এর পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব-৭, জানায়, ভুক্তভোগী যুবতী (১৯) একজন গার্মেন্টসকর্মী এবং চট্টগ্রাম জেলার পাঁচশাইশ এলাকায় তার মা-বাবার সাথে বাড়া বাসায় বসবাস করছিল।  তার কর্মস্থালে আসা-যাওয়াকালীন বখাটে সিদ্দিক ডিবি সিদ্দিক ও তার ২/৩ বন্ধুদের সাথে নিয়ে যুবতীকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।

পরবর্তীতে বখাটে সিদ্দিক বিবাহ করবে বলে আশ্বস্ত করলে যুবতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরই ধারাবহিকতায় গত (১৩ অক্টোবর ২০১০) রাত ৮টায় গার্মেন্টস ছুটির পর যুবতী বাসার ফেরার পথে আব্দুর শুক্কুর ও কয়ৈতা বেগম শেফালী’র সহযোগীতায় বখাটে সিদ্দিক ডিবি সিদ্দিক বিবাহ করার কথা বলে মুহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় সিদ্দিকের পরিবারের কোন সদস্যকে দেখতে না পেয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে যুবতীকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি এবং বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যুবতীকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে বিবাহের প্রস্তুতির কথা বলে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন আটকে রেখে জোড়পূর্বক যুবতীকে ধর্ষণ করে।

যুবতীর সন্ধান না পেয়ে তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে যুবতী কর্মস্থলের বান্ধবী ও আশপাশের লোকজনের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সিদ্দিক ডিবি সিদ্দিকের বাসায় গিয়ে যুবতীর খোঁজে পায়। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে আব্দুর শুক্কুর ও কয়ৈতা বেগম শেফালী উদ্ধারে বাধা প্রদান করে। পরবর্তীতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের সহায়তায় যুবতীকে উদ্ধার করে।

ওই ঘটনায় যুবতীর মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানায় ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৬, তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১০ইং, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন আইন ২০০০ ৫(১)/৩০ ও ৯(১)/৩০, নারী ও শিশু মামলা নং ৫০৯/১৮ (নতুন), ১০৯/১১ (পুরাতন)।

মামলা রুজুর পর হতে বর্ণিত ধর্ষক ও সহযোগীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামী কয়ৈতা বেগম শেফালী চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ মডেল থানা এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী  কয়ৈতা বেগম শেফালীকে (৪৫) গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত শেফালী’র দেওয়া তথ্য মতে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় পাঁচলাইশ মডেল থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামী আব্দুর শুক্কুরকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে  সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।