আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লুইজেন অল হাথলাউল সৌদি আরবের অতি পরিচিত মহিলা সমাজসেবী। সমাজে মহিলাদের অধিকার রক্ষায় সব সময়েই প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকেন তিনি। আন্দোলন চালিয়ে একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছেন। জেলে নির্মম মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তা সত্ত্বেও মহিলাদের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আজও।
সৌদি আরবের জেড্ডায় জন্ম তাঁর। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক তিনি। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত হয়েছিল। ২০২০ সালে বাকলাভ হেভেন হিউম্যান রাইটস সম্মানের জন্যও তাঁর নাম মনোনীত হয়েছে। যা ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল বিজেতার নাম ঘোষিত হবে।
সৌদিতে মহিলাদের গাড়ি চালানোর অধিকার এনে দেওয়া এবং পুরুষ অভিভাবকত্ব থেকে মহিলাদের বার করে আনার অন্যতম কৃতিত্ব তাঁরই। এমন এক জন বহুল জনপ্রিয় সমাজকর্মীর উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে সৌদির জেলে. যা নিয়ে সরব হয়েছে সারা বিশ্বই।
সম্প্রতি ২০২১-এর ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদির জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সময়ের আগেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যম তোলপাড়। কারণ এক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে তাঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন কারাকর্তা এবং অন্যান্য রক্ষীরা। অভিযোগ, তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়, কারাকর্তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়, জেলের রক্ষীদের সঙ্গে বসিয়ে পর্নোগ্রাফিও দেখানো হয়। এ ছাড়া সিলিং থেকে ঝুলিয়ে মারধর, বিদ্যুতের শকের মতো নির্যাতন তো হয়েছেই।
২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেফতার হন তিনি। মহিলাদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে সৌদি আরব যান গাড়ি চালিয়ে। তাঁর কাছে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। ৭৩ দিন জেলে ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে পুরুষ অভিভাবকত্বের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার মহিলার সই সংগ্রহ করে সুলতান সলমনের কাছে পাঠান। ফের তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারির কোনও স্পষ্ট কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে মহিলা এবং সমাজকর্মী হওয়ার জন্যই তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে অপহরণ করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে সৌদিতে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তখন থেকেই জেলেই ছিলেন তিনি। এ সব অবশ্য দমাতে পারেনি তাঁকে। তাঁকে যত বার গ্রেফতার করা হয়েছে, তত সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। আর যত সোচ্চার হয়েছেন তাঁর মুখ বন্ধ করার প্রক্রিয়াও তত নির্মম হয়েছে। তাঁর একটি আন্দোলন বড় সাফল্য পায়। ২০১৮ সালের জুনে মহিলাদের গাড়ি চালানো থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি প্রশাসন। জয় হয় মহিলাদের। লুইজেন তখনও জেলবন্দি। জেলে থাকার সময় তাঁকে পরিবারের সঙ্গেও দেখা কিংবা কথা বলতে দেওয়া হত না। লুইজেনের সঙ্গে আরও কয়েক জন মহিলা সমাজকর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এটা জানতে পেরে জেলেই অনশনে বসেন লুইজেন। ৬ দিন অনশনের পর তিনিও পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নেন। ভিডিয়ো কলে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথাও বলেন।
সম্প্রতি টানা ১০০১ দিন জেলে কাটানোর পর মুক্তি পেয়েছেন লুইজেন। তাঁর মুক্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Leave a Reply