অনলাইন ডেস্ক: বগুড়া ডিবি পুলিশ হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) নামে এক আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বজন ও আইনজীবীর সহকারীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বুধবার রাতে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাবিবের মৃত্যুর পর তার মামা অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক ও অন্যরা দাবি করেন, ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে হত্যা করেছে। আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবী সহকারী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পর মামলা করা হবে।
ডিবি ওসি মোস্তাফিজ হাসান দাবি করেছেন, হত্যা মামলার ওই আসামিকে নির্যাতন করা হয়নি।
সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২০১৩ সালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া তালপুকুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে বিপুলকে (১৫) অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এ মামলায় জোড়া দামারপাড়ার আবদুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে ও বগুড়া আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি। এছাড়া নিহত শিশুটির সৎ মা খুকি বেওয়া মামলার সাক্ষী ছিলেন।
হাবিব বগুড়া জজ কোর্টের আইনজীবী মঞ্জুরুল হকের ভাগ্নে ও তিনি তার মোহরার হিসেবে কাজ করতেন। মৃত খোরশেদ আলমের স্ত্রী খুকি বেওয়া গত ৩ আগস্ট তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ ছিলেন। ৫ আগস্ট সকালে বাড়ির কাছে লিচু বাগানে তার বস্তাবন্দি পচা দুর্গন্ধ লাশ পাওয়া পায়। তার দুই পা (হাঁটুর উপর) বিচ্ছিন্ন ছিল। নিকটে এক পা পাওয়া গেলেও অপর পা সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছিল। পুলিশ গত মঙ্গলবার সকালে জোড়া তালপুকুর গ্রামে মনোয়ারা মুন্নি (৬০) নামে এক নারীর বাড়ির পায়খানার সেফটিক ট্যাংকে নিখোঁজ ওই পা পাওয়া যায়। ডিবি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি খুকি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে হাবিবের নাম প্রকাশ করেন। ডিবি পুলিশের একটি দল ওইদিন বিকালে বগুড়া আদালতের দরজার কাছ থেকে হাবিবকে গ্রেফতার করে তাদের অফিসে নিয়ে যায়।
ডিবি পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান দাবি করেন, মনোয়ারা মুন্নিকে দেখেই হাবিবুর রহমান হাবিব বুকে ব্যথা বলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা ৬.৫৫ মিনিটে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, বুকে ব্যথার কথা উল্লেখ করে অচেতন অবস্থায় হাবিবকে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মৃতের শরীরে কোনো আঘাতে চিহ্ন নেই।
এদিকে ঘটনার পরপরই মৃতের মামা অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক দাবি করেন, পুলিশ তার ভাগিনা ও মোহরার হাবিবকে সুস্থ অবস্থায় গ্রেফতারের পর নির্যাতন করে মেরে ফেলে। তার কোনো হৃদরোগ ছিল না। তিনি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে স্বজন ও পুলিশের উপস্থিতিতে মৃত হাবিবের সুরতহাল করেন, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম। তিনি বলেন, মৃতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাননি। বুধবার দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, মরদেহের হৃদযন্ত্র ও প্রয়োজনীয় অংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে আইনজীবী সহকারী নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে হত্যার দাবি করায় পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম ও পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর জিএম শামসুন নূরকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বগুড়া আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের ডিবি পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সহকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, ডিবি পুলিশ নির্যাতনে তাকে হত্যা করেছে।
সমিতির সভাপতি আবু তৈয়ব হুদা সাংবাদিকদের জানান, হাবিবের পরিবার থেকে মামলা না করলেও সমিতির পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। এছাড়া তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে শিগগিরই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
Leave a Reply