অনলাইন ডেস্ক: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তথাকথিত জলবায়ু ঋণ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা বলেছেন, ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো জলবায়ু অর্থায়নের নামে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ঋণগ্রস্ত করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী ধনী দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কোনোভাবেই ঋণ নয়।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), গ্লোবাল ল থিঙ্কার্স সোসাইটি (জিএলটিএস), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ), সুন্দরবন ও উপকুল সুরক্ষা আন্দোলন, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশ আয়োজিত কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোস্তফা কামাল আকন্দ।
সমাবেশে ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমান বৈদেশিক ঋণ মাথাপিছু ১১০০ মার্কিন ডলার। যা সংকট বাড়ছে এবং এই ঋণ পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব।
তাই ঋণের পরিবর্তে আমাদের দেশের জন্য একটি টেকসই জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ঋণনির্ভর নীতি সহায়তা গ্রহণ করায় বাংলাদেশসহ অনেক স্বল্পোন্নত দেশ ইতিমধ্যে ঋণের ফাঁদে আটকে গেছে। জাইকা চালিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান-২০৩০ একটি ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা এবং এটি বাংলাদেশের জন্য পরনির্ভরতা তৈরি করবে। তিনি সরকারকে এই ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন।
কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দরিদ্র বিরোধী ভূমিকা হতাশাজনক। এখন তারা আবার তথাকথিত নীতি সমর্থন নিয়ে হাজির হয়েছে, যা অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য ঋণের বোঝা তৈরি করছে।’ তিনি বিদ্যমান বৈশ্বিক আর্থিক প্রক্রিয়াকে সম্পদ পাচার উপযোগী একটি শোষণমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ধনী দেশগুলো ১৯৮০-এর দশকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রারে মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশগুলি থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ নামক নতুন বৈশ্বিক সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসে ‘জলবায়ু অর্থায়ন’ নাম দিয়ে স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছে।
তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দরিদ্র দেশগুলিকে দেওয়া জলবায়ু অর্থায়নকে ধনী দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। এসব অর্থায়ন শর্তহীন হতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, দরিদ্র দেশগুলো ঋণ পরিশোধের জন্য ইতিমধ্যে কৃষিসহ দারিদ্রবান্ধব সরকারি সেবা খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, ফলে দারিদ্র বাড়ছে। ঋণ নির্ভরতার দুষ্টচক্র জলবায়ু বিপর্যয়কে আরো তীব্রতর করে তুলছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় সক্ষমতাকে দুর্বল করে তুলছে। এ কারণেই জলবায়ু ঋণ বাতিলের কোন বিকল্প নেই।
Leave a Reply