অনলাইন ডেস্ক : বিশেষ সুবিধাতেও খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতির অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বেসরকারি খাতের পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংক। অন্ধকারেই হাবুডুবু খাচ্ছে। ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের যেমন খেলাপি ঋণ বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি। আর প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকেই এই পাঁচ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বিদ্যমান। তিন বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেও খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি রয়েই গেছে। এর মধ্যে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তি স্থগিত এবং কিস্তি না দিলেও নতুন করে খেলাপিকরণ বন্ধ আছে। এ দুই সুযোগেও বেসরকারি এই পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পারেনি। বা প্রভিশন ঘাটতি শূন্যে নামাতে পারেনি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তিন বছরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এই বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৬৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তিন বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ কোটি টাকা এবং প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বৃদ্ধির তালিকায় সামনের দিকে রয়েছে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬১১ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অপর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং ১৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
করোনার কারণে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় ব্যাংক খাতে সার্বিক খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রভিশন সংরক্ষণের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকে খেলাপি ও প্রভিশন দুটোই কমেছে। প্রভিশন হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিশেষ সঞ্চিতি। তিন ধরনের খেলাপি ঋণ ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ, ডাউটফুল বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণ ও সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা প্রাথমিক স্তরের খেলাপি ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে শতভাগ, ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যাংকে রাখতে হয়। মূলত গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষা হিসেবে এ অর্থ রাখা হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের ৪১টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি ৪১ ব্যাংকের মধ্যে ৪০টির প্রত্যেকের কম বেশি এই খেলাপি ঋণ রয়েছে। কিন্তু ৩৬টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই। আর উল্লেখিত পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পাশাপাশি প্রভিশন ঘাটতিও রয়েছে।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Leave a Reply