আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এই হামলা একটি সুক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল। হামলাটি এমন সময়ে হয়েছে যখন নাসরুল্লাহ এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর অন্যান্য নেতারা লেবাননের বৈরুতে একটি বাঙ্কারে জড়ো হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের (ডব্লিউএসজে) প্রতিবেদনমতে, দক্ষিণ বৈরুতের একটি ব্যস্ত এলাকা থেকে বাঙ্কারটি ৬০ ফুটেরও বেশি নীচে ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নেতারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে সেই বাঙ্কারে জড়ো হয়েছিলেন।
হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার লক্ষ্যে ইসরাইল সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছে বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া মাটির নীচে ৬০ ফুটেরও বেশি ভারী সুরক্ষিত অবস্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ইসরাইল প্রায় ৮০ টন বোমা ব্যবহার করেছে।
হামলার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জেনারেল স্টাফের প্রধান হারজি হালেভি বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে নির্মূল করতে একটি সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছি। সন্ত্রাসী সংগঠনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে অবস্থানকালে এই হামলা চালানো হয়েছে।’
হামলায় হিজবুল্লাহর ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং ক্ষেপণাস্ত্রের একটি মজুতও ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তারা ডব্লিউএসজেকে জানিয়েছেন, এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে কয়েক মাস ধরে। সুনির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করে বাংকারের ভূগর্ভস্থ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি জানিয়েছেন, তাদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে,নাসরুল্লাহ অনেক সিনিয়র নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে জড়ো হয়েছেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই হামলা চালানোর অনুমোদন দেন। তবে এই হামলার সময় নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আক্রমণের আগে বিষয়টি তাদের না জানানোয় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। কারণ, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে বলে ধারণা তাদের।
হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইল এবং ইহুদি লক্ষ্যবস্তুতে অসংখ্য প্রাণঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তুলে আসছে ইসরাইল। আর তাই কয়েক দশক ধরে তাকে হত্যার জন্য তালিকায় রেখেছিল ইসরাইল। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ইসরাইলের টার্গেট কিলিং এর মধ্যে নিঃসন্দেহে নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড বড় একটি ঘটনা।
নাসরুল্লাহর হত্যার পর প্রথম জনসমক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি তা অর্জনের জন্য নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রয়োজন ছিল।
Leave a Reply