1. admin@zzna.ru : admin@zzna.ru :
  2. md.masudrana2008@gmail.com : admi2017 :
  3. info.motaharulhasan@gmail.com : motaharul :
  4. email@email.em : wpadminne :

অজান্তেই সাইবার অপরাধের জাল

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১
  • ২৩২ বার

অনলাইন ডেস্ক : তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। তবে যে অনুপাতে ব্যবহারকারী বাড়ছে, সেই হারে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা না বাড়ায় নিজের অজান্তেই সাইবার অপরাধের জালে ফাঁসছেন ব্যবহারকারীরা। আর এভাবেই অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংঘটিত হচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, গুজব, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, পাইরেসি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ বড় বড় অপরাধ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার অপরাধ একটি বাউন্ডারিলেস ক্রাইম। কারণ এ ধরনের অপরাধ শুধু আন্তঃদেশীয়ভাবেই ঘটে না। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অপর প্রান্তের যে কোনো একটি দেশের নাগরিকদের ভুক্তভোগী বানাতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই, পাশাপাশি গ্রাহকদের ইন্টারনেটের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশ টেলিরেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১১ দশমিক ৮৭৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে ১০২ দশমিক ৩৫৩ মিলিয়ন ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর আইএসপি এবং ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৯ দশমিক ৫২২ মিলিয়ন ব্যবহারকারী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে সাইবার অপরাধ বেড়েছে। গত বছর (২০২০ সাল) সাইবার অপরাধের ঘটনায় ডিএমপির ৫০টি থানায় মোট মামলা হয়েছে ৩১৭টি এবং এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৮৪ জন। অথচ ২০১৯ সালে এই অপরাধে মামলা ঢাকার থানাগুলোতে মামলা হয়েছিল ২৮৪টি এবং গ্রেফতার হয়েছিল ১৭১ জন। প্রতিমাসে রাজধানীতে গড়ে সাইবার অপরাধের মামলা হয় ৩০টি করে।

ভুক্তভোগীদের ৮০ ভাগই নারী:
এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে সাইবার অপরাধের ঘটনায় প্রায় ২৮ হাজার অভিযোগ এসেছে এই সংস্থার কাছে। এসব সাইবার অপরাধের প্রায় ৯০ ভাগই ঘটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ৮০ ভাগই নারী। এ ছাড়া পুরুষরাও অনেকেই নানা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, সাধারণত সাইবার ক্রাইমের যেসব অভিযোগ আমরা পাই এর বেশির ভাগ অভিযোগই আসে মেয়েদের কাছ থেকে। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মেয়ের বয়সই ১৪ বছর থেকে ২২ বছর। প্রেমিক, বন্ধু, সহপাঠী, প্রতিবেশীসহ নানান ধরনের মানুষ দ্বারা মেয়েরা প্রতিনিয়ত সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ভয়ঙ্কর সব ফাঁদে নারীরা:
হঠাৎ সাদিয়ার (ছদ্মনাম) মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। বার্তায় তাকে হুমকি দেয় হয়, মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে তার ব্যক্তিগত ও গোপনীয় ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হবে। সাদিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না কাজটা তার সাবেক প্রেমিকের। সাদিয়া দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সে আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে থাকে। ক্রমাগত আমার ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে বিকাশে টাকা না পাঠালে আমার সর্বনাশ করবে। বাধ্য হয়ে আমি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করি। পরে তাকে আটক করা হয় এবং তার ডিভাইস থেকে সব কনটেন্ট ডিলিট করা হয়। তবে মান সম্মানের ভয়ে আমি কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ওই ছেলের পরিবারের লোকজনের সামনে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়ার বাসিন্দা এক নারীকে জড়িয়ে স্থানীয় সাতজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল প্রচারণা করেন। ওই নারীর স্বামী প্রবাসে। এ অপপ্রচারে ভুক্তভোগী নারী সামাজিকভাবে অপমানের শিকার হন। তার সংসারেও কলহের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি, বাকি দুজন প্রবাসে পলাতক রয়েছেন। গত সোমবার (১ মার্চ) সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার ৫ যুবকের মধ্যে তিনজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ ও একজনের বিরুদ্ধে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। অপর আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

১৬ বছরের কিশোরী নাদিয়া (ছদ্মনাম)। খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় মানুষের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও আশপাশের সমবয়সীদের প্ররোচনায় পরে নিজের মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যুক্ত হন এই কিশোরী। ৭/৮ মাস আগে বরিশালের আরিফুল ইসলাম সুমন নামে ২৪ বছরের এক তরুণের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় তার। এরপর কথোপকথনের এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে তারা। এক পর্যায়ে নাদিয়া সুমনকে তার পারিবারিক অসহায়ত্ব ও আর্থিক অচ্ছলতার কথা জানায়। সব শুনে সুমন তাকে ভালো কাজ দেবে বলে আশ্বস্ত করেন। নাদিয়াকে বলে, তুমি যদি বরিশালে চলে আসো, তাহলে ভালো একটা কাজ দিতে পারব। এখানে আমার পরিবারের সঙ্গেই তুমি থাকবে।

সুমনের কথায় আশ্বস্ত হয় নাদিয়া। পরবর্তীতে সুমন তার স্ত্রী হাবিবা আক্তার সুমিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাদিয়াকে বরিশালে নিয়ে আসে এবং নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের ভাড়া বাসায় তাকে রাখে। কিন্তু প্রতিশ্রতি অনুযায়ী নাদিয়াকে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন সুমন। চাকরি না দিয়ে ওই বাসায় নাদিয়াকে আটকে রাখেন তারা। পরবর্তী সময়ে তাদের বন্ধু আরিফের সহায়তায় নাদিয়ার সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপ করার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন সময় তাকে যৌননিপীড়ন করতে থাকেন। নাদিয়া বুঝতে পারে অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে ঢাকা থেকে বরিশালে এনে আটকে রাখা হয়েছে। তখন সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সুমন তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এভাবে প্রায় চার মাস ১৯ দিন আটক থাকার পর গত সোমবার (১ মার্চ) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে পুলিশ সুমনের বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে সুমন, তার স্ত্রী হাবিবা ও বন্ধু আরিফকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান।

অনলাইনে কন্যাশিশুরাও যৌন হয়রানির শিকার:
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে দেশে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়ে শিশু অনলাইনে যৌন শোষণ, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৩০ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, করোনাকালে তারা কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ১২ শতাংশ শিশু এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নিপীড়িত শিশুদের ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হচ্ছে কন্যা শিশু এবং ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলে শিশু।
সংস্থাটির শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক অম্বিকা রায় বলেন, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি। ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। যদিও বেশি বয়সী শিশুরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে সার্বিকভাবে সব শিশুই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি এবং নিপীড়নের আশঙ্কায় রয়েছে।

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে সেক্স টয় :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে দেশে নিষিদ্ধ বিভিন্ন ধরনের সেক্স টয় বিক্রি করে আসছিল অপরাধীরা। সম্প্রতি এই চক্রটির ৬ সদস্য সিআইডির জালে ধরা পড়েছে। গত শনিবার ঢাকা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার সেক্স টয়, ৫টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও ৯টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ঢাকার কলাবাগানে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর ময়নাতদন্তে বলা হয়, ‘বিকৃত যৌনাচারের’ ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছিল। বিষয়টি সিআইডির সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিমের নজরে এলে তারা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে যৌন উদ্দীপক বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্যের ছবি এবং ভিডিওসহ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এরপর ওই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, চক্রটি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির আড়ালে এসব ‘নিষিদ্ধ পণ্য’ বাংলাদেশে আনে। পরে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এসব পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। যেমন- লাইকি, টিকটক ব্যবহার করে ক্লোজড গ্রুপ তৈরি করে, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ডিজে পার্টির আড়ালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছিল।

বাংলার বিবেক /এম এস

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 BanglarBibek
Customized BY NewsTheme