রাজশাহী : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই এবার রাজশাহী রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায়ও রাজশাহীর অবস্থান রয়েছে শুরু থেকেই।
সোমবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে বৈশাখী কেনাকাটার জন্য মার্কেটে জনস্রোত নেমেছে। সকাল থেকে ভিড় ঠেলে মানুষ চাঁদ রাতের মতো করেই নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা সারছেন। দুইদিন পরই কঠোর লকডাউন। তাই কেউই যেন এই হাতে থাকা সামান্য সময়টুকু নষ্ট করতে চাইছেন না। জীবনের মায়া ভুলে উৎসবে গা ভাসাতে বেশিরভাগ মানুষই এখন মার্কেট ও বিপণিবিতান মুখি!
এদিকে ১৪ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সাত দিন কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লকডাউনের খবরের পর রাজশাহীর মার্কেট-শপিংমলে যেন ঈদের কেনাকাটা চলছে। কেউ বৈশাখী কেনাকাটা করছেন, কেউ ঈদের কেনাকাটা করছেন। আবার কেউ একসঙ্গে পহেলা বৈশাখ এবং ঈদের কেনাকাটা দুটোই করে নিচ্ছেন। অনেকের ধারণা ঈদের আগে আর এই লকডাউন ছুটবে না। এমন চিন্তার জায়গা থেকে সবাই কেনাকাটা করতে মার্কেটের বিপণিবিতানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব কিংবা বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতেও উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। অথচ শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই শর্ত আর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। আর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে দিনের বেলা বাজারগুলোতে প্রশাসনিক তেমন কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি আজও।
সোমবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজশাহীর মার্কেগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীর প্রায় সব মার্কেটের দোকান খোলেন ব্যবসায়ীরা। পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুটপাতেও। এতে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।
মহাগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, কোর্টবাজার, মাস্টারপাড়া, গণকপাড়া, কাপড়পট্টি ও আলুপট্টি এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় সব মার্কেট, শপিংমল ও শো-রুমগুলোয় ক্রেতায় ঠাসা। শপিংমলগুলোর চেয়ে মার্কেটগুলোতে ভিড় বেশি। শো-রুমের কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আগ্রহ দেখা গেলেও মার্কেটগুলোর কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষ বরণের জন্য মহানগরীর মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ ভিড় বেশি ছিলো।
শো-রুম ও মার্কেট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারিভাবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঈদ এবং রমজানের আগে মুহূর্তের এ সময় থেকেই তাদের বেচাকেনা বাড়ে। কিন্তু এই লকডাউনের কারণে কয়েকদিন তেমন কোনো ক্রেতা ছিলো না। কিন্তু ১৪ তারিখ থেকে কড়াকড়ি লকডাউন আসবে এমন খবরে ক্রেতা বেড়েছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনানুযায়ী মাস্কসহ নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে। কিন্তু কেউ কেউ অলসতার কারণে মাস্ক পরছেন না। আর ভিড় বাড়লে রাজশাহীর বর্তমান বাজার অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কষ্টকর হয়ে যায়। তবে একেবারে স্বাস্থ্যবিধি যে মানছেন না এমনটা না। সোমবার দুপুরে রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটে বৈশাখী কেনাকাটা করতে আসা শিউলি আক্তার বলেন, এক বছরের বেশি সময় থেকে করোনা পরিস্থিতি চলছে। এর মধ্যে দিয়ে তারা বেঁচে আছেন। এখনও করোনা সংক্রমিত হননি। তার মতে, যারা সংক্রমিত হওয়ার তারা হবেন। যারা হওয়ার না তারা হবেন না। এত কিছু মেনে কী আর জীবন চলে? তাই আমরা সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করছি মাত্র।
রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান দাবি করে বলেন, ব্যবসায়ীরা মাস্ক ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি করছেন না। শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছেন। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না এই কথাটা ঠিক নয়। তবে কখনও কখন ক্রেতাদের ভিড় বেশি হলে অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কষ্টকর হয়ে যায় বলে স্বীকার করেন রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতা।
জানতে চাইলে রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। আবার কাউকে মানাতেও পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা করছি। এভাবে বেপরোয়া চলাচল আমাদের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। তাই এই মুহূর্তে সবার ঘরে থাকা এবং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বাইরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে মার্কেট, শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা আসার পর তারা এই নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেটগুলো মনিটরিং করছেন। ব্যবসায়ীদের সচেতন করছেন। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যত্যয় ঘটলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ঊর্ধ্বতন ওই পুলিশ কমকর্তা।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply