অনলাইন ডেস্ক : বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতাল। এটি শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড হিসেবে বরাদ্দ। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে শয্যা সর্বসাকুল্যে ৪টি। কিন্তু ভর্তি ৫৪ জন রোগী। একই শয্যায় একাধিক রোগী তো বটেই, এমনকী উপচে পড়েছে মেঝেও। তাতেও যখন সংকটের সমাধান হচ্ছিল না, তখন হাসপাতাল ভবনের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ডায়রিয়া রোগীদের। ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যেও ওষুধ ও স্যালাইন সংকটের কথাও জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।
বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত পাঁচ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৭০ জন রোগী। অনেকে আবার করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না। বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিত্র।
পেটের রোগ নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা, এমনকী উপজেলা থেকেও রোগীরা ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ অসুখটিকে ডায়রিয়া বলে দাবি করলেও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশই জানাচ্ছেন, রোগীর মলের সঙ্গে রক্তও বেরোচ্ছে। তাই একে ডায়েরিয়া না বলে আন্ত্রিক (পেটের) বলাই শ্রেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে বেড সংখ্যা বাড়িয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, পুরো মার্চ মাসেজুড়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল পাঁচ শতাধিক। তবে এপ্রিল মাসে তা বেড়ে যায় অনেক। এপ্রিলের এই ১৪ দিনে প্রায় ৮০০ রোগী ভর্তি হয়েছেন চার বেডের এই ওয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার রোগী ভর্তি রয়েছেন ৫৪ জন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের চরম ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। ডায়ারিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে, বারান্দা এবং ওয়ার্ডের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। অনেকে মাঠে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম বলেন, চরবাড়িয়া থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী সানজানা বেগমকে ভর্তি করা হয়েছে এখানে। প্রথমে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখন হাসপাতালের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
বোরহান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ওষুধ বা স্যালাইন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। ভোগান্তি থেকে রক্ষা দরকার। এমনিতেই ওয়ার্ডের বাইরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে খুব কষ্টের মধ্যে।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মলয় কৃষ্ণ বড়াল সাংবাদিকদের বলেন, সিজনের কারণে মূলত এই সমস্যা হচ্ছে। রোগীর মলের সঙ্গে রক্তও বেরোচ্ছে। তাই একে ডায়রিয়া না বলে আন্ত্রিক (পেটের) বলাই শ্রেয়। তাছাড়া মানুষের অসচেতনতাও ডায়রিয়া হওয়ার কারণ। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শঙ্কর প্রসাদ অধিকারী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শাহাবুদ্দিন গাজী (৩০) নামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠী এলাকার শাহ আলম গাজীর ছেলে। বুধবার শাহাবুদ্দিন গাজীর ডায়রিয়া হয়। এরপর করোনা সংক্রমণের ভয়ে তিনি নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
ডা. শঙ্কর প্রসাদ অধিকারী আরও জানান, এর আগে গত ১০ এপ্রিল উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের চরবিশরকান্দি এলাকার মো. আলতাফ ফরাজীর মৃত্যু হয়। তিনিও বাড়িতে মারা গেছেন। আলতাফ ফরাজীর স্বজনরা জানান, ১০ এপ্রিল সকালে ডায়রিয়া শুরু হয় তার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply