রাজশাহী : রাজশাহীতে সম্প্রতি স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মারধরের শিকার হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য। কিন্তু এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। যে বাড়িতে তারা মারধরের শিকার হন সেই বাড়ির মালিকের ছেলেকে বাদি করে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই মামলায় হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মূল অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি। মামলার এজাহারে অনধিকার প্রবেশ, অবৈধভাবে অবরোধ করে মারপিট ও রক্তাক্ত জখম, চাঁদা দাবি, চুরি, শ্লীলতাহানি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ করা হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে নগরীর মতিহার থানার ধরমপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মামলার বাদি মো: জামাল উদ্দিন। তিনি এই এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে।
তবে এরইমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নং আসামি সুইটকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সুইট ওই এলাকার জালালের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১১ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে জেলার মোহনপুর থেকে প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে রাজশাহীতে বন্ধুর ভাড়া করা বাসায় যান পুলিশ সদস্য খাইরুল ইসলাম। কিন্তু পুলিশ সদস্য খাইরুলের বন্ধু ওই সময় বাসায় ছিলেন না। এই সুযোগে খায়রুল ও তার প্রেমিকা বাসার একটি রুমে অবস্থানকালে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি গিয়ে তাদের দু’জনকে মারপিট করেন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশে টাকা আদায় করেন। খবর পেয়ে খাইরুলের বন্ধু নগরীর মতিহার থানার পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এসময় আসাদুজ্জামান হামলাকারী ব্যক্তিদের নিকট জানতে চান কেন টাকা দিতে হবে। তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকেও মারপিট করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরে মতিহার থানার এসআই সেলিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই বাসার মূল মালিক আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী তানজিলা তাদের দুই ছেলেকে মারপিট করেন।
এ ঘটনায় পরদিন ১২ এপ্রিল বাসার মালিকের ছেলে জামাল উদ্দিন বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় হামলার শিকার পুলিশ সদস্য খায়রুল ও তার প্রেমিকাকে স্বামী-স্ত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ মামলা দায়েরের আগের দিন স্থানীয় লোকজন ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তারা প্রেমিক-প্রেমিকা বলে স্বীকার করেন। বিয়ের কাবিননামাসহ নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ঘটনার দুইদিন আগেই ৯ এপ্রিল তারিখে তারা বিয়ে করেছেন বলে কাবিননামা উপস্থাপন করছেন। তাহলে ১১ এপ্রিল তারা উভয়ই নিজেদের প্রেমিকা-প্রেমিকা বলে কেন দাবি করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কী নিজেদের বাঁচাতে তারা সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্টারকে দিয়ে ব্যাক ডেটে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন- এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। পুরো বিষয়টি নিয়ে ‘লুকোচুরি’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্থানীয় অনেকে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় জামালের মামলায় হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মূল অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, মূল অভিযুক্ত ওই দুই ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তাই ওই মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে পরে জানাবো।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply