অনলাইন ডেস্কঃ রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে সরকার বেঁধে দেওয়া দাম গতকাল বুধবার পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তবে ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধিতে গত কয়েক দিনের তুলনায় সব পর্যায়েই ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। দুই দিন বন্ধ থাকার পর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি আড়তে ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে গতকাল ডজনপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকায়। এ হিসাবে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে খুচরা পর্যায়ে গতকাল ডজনপ্রতি ১৮ থেকে ২৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, যা গতকাল থেকে সারা দেশে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সরকার নির্ধারিত মূল্য হচ্ছে—উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। এই হিসাবে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান নির্ধারিত এ মূল্যের কথা জানান।
কিন্তু গতকাল পাইকারি থেকে খুচরা বিক্রেতা কেউই এ মূল্যে ডিম বিক্রি করেননি।
গতকাল তেজগাঁওয়ের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে খামারিদের কাছ থেকে তাঁরা প্রতিটি ডিম ১২ টাকা করে কিনেছেন এবং তা বিক্রি করেছেন ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে। আর রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি করা হয় ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত। তবে রাজধানীর অন্যান্য খুচরা বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে ডজনপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে খুচরায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৫৫ থেকে ১৫৬ টাকায়।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, ‘ডিমের দাম বেড়ে যে অবস্থায় গিয়েছিল, সেখান থেকে যৌক্তিক দামে আসতে আরো দু-এক দিন সময় লাগবে। এটা এক দিনের মধ্যে ধরে বেঁধে কমানো সম্ভব নয়, যদিও উল্লেখযোগ্য হারে দাম কমছে। আমরা যত কম দামে কিনতে পারব, তত কম দামে বিক্রি করব।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতিডজন ডিম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাড়া-মহল্লায় এর চেয়ে কিছুটা বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের বিক্রেতা মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে আরো কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।’ মোহাম্মদপুর টাউন হলে গতকাল প্রতিডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়।
রাজধানীতে ডিমের অন্যতম বড় আড়ত তেজগাঁওয়ে। এই বাজারে গত রবি ও সোমবার রাতে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে তাঁদের ডিম ক্রয় ও বিক্রয় করতে হচ্ছে। এর ফলে তাঁরা সরকারি সংস্থার জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়তে পারেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দর বাস্তবায়নে আমরা উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা এই তিন স্তরেই নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম রাখব। সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিটি জায়গায় নজরদারি চলছে।’ এ সময় কারওয়ান বাজারে অস্বাভাবিক বাড়তি দামে সবজি বিক্রি করায় এক বিক্রেতাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজধানীর দুই বাজারে রাতে ২০ লাখ ডিম বিক্রি করেন উৎপাদকরা
রাজধানীর তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে গত রাতে ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ডিম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে আড়তদারদের কাছে এই ডিম পৌঁছে দেয়। আড়তে প্রতিটি ডিম বিক্রি করা হয় ১০ টাকা ৯১ পয়সায়। আড়তদাররা এসব ডিম ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকা করে বিক্রি নিশ্চিত করবেন— এই শর্তে নিজেদের উদ্যোগে আড়তে ২০ লাখ ডিম সরবরাহের উদ্যোগ নেয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।
পোলট্রিশিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডিমের দাম ও সরবরাহ নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিমের উৎপাদক, পাইকারি বিক্রেতা ও সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে ডিম উৎপাদনকারী বড় কম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবেন। এর মাঝে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না।
Leave a Reply