অনলাইন ডেস্কঃ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে এক কিশোরকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে এ তথ্য জানিয়ে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নিদেশ দেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
’ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোরের হাত এবং ঘাড় রশি দিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পেটাচ্ছে কিছু লোক। সেখানে দুজন গ্রাম পুলিশকেও দেখা যায়। কিন্তু এ সময় কোনো রকম বাধা দেননি তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার কিশোর তার বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করে।
প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে সম্প্রতি তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে গত শনিবার নিজবাড়ির সামনে থেকে ওই কিশোরকে ধরে নিয়ে যায় মেয়ের বাড়ির লোকজন। পরে তাকে বাড়ির আঙিনায় আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে।
পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
এ সময় আবদুল খালেক, করিম মিয়া, রবিউল, সেহেরুল, মোস্তা, আনারুল, রউফ, তালেব, কুদ্দুস, মিজানসহ ১৫-২০ জন লাঠি দিয়ে ওই কিশোরকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার শতাধিক বাসিন্দা ওই কিশোরের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। এ সময় তার স্বজনরা অভিযোগ করতে থাকে।
কিশোরের বাবা জানান, তার ছেলের কোনো দোষ নেই। মেয়েপক্ষের লোকজন অন্যায়ভাবে তার ছেলেকে খুব মেরেছে। তিনি এ ঘটনার ন্যায্য বিচার দাবি করেছেন।
কিশোরের দাদি বলেন, ‘হামার নাতিক আনি দ্যাও। বিনা দোষে ওরা ছইলট্যাক এংকা (এ রকম) করি গরুর মতন ডাংগাইলো (মারল)।’
স্থানীয় এক নারী জানান, ছেলেটির কোনো দোষ নেই। তারা শুনেছেন মেয়েটির সঙ্গে কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ অপরাধে তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু মারধর করা ঠিক হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, মেয়েটির বাবা গায়ের জোরে লোকজন ভাড়া করে ছেলেটিকে মারধর করেছেন। তারা গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন। এর সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
মেয়ের বাবা জানান, ছেলেটি তার মেয়েকে বারবার বিরক্ত করে আসছিল। তাই তাকে ধরে শাসন করেছেন তিনি। কয়েক দফা তার বাড়ি গিয়েছিল ছেলেটি। এ ঘটনাটি এলাকার লোকজন জানে।
তবে কিশোর অপরাধ করে থাকলে আইনের সহযোগিতা না নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
রংপুরের মিঠাপুকুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘ছেলেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা ঠিক হয়নি। তাকে রক্ষার জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ১৫১ ধরায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছেলেটির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সে জানিয়েছে যে সে কয়েকবার ওই মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। তবে তদন্ত করে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ছেলেটির পরিবারের লোকজন কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply