আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রসারণবাদী শক্তি হিসেবে ইতিমধ্যেই বদনাম হয়ে গিয়েছে। তবে এ বার শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়। চিনা আগ্রাসনের কবলে এখন অস্ট্রেলিয়াও। অভিযোগ, পর্যটনের নামে লিজ নিয়ে তাদের একটা দ্বীপই বাগিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটছে চিন। ভারত মহাসাগরে ভারতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহড়া দেওয়া নিয়ে আগেই বেজিংয়ের বিরাগভাজন হয়ে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। তার মধ্যে দ্বীপ নিয়ে টানাপড়েন দু’দেশের তিক্ততায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্বে অবস্থিত কুইন্সল্যান্ড প্রদেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত গোটা বিশ্বে। সেখানকার দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর। এ ছাড়াও বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী, ডেনট্রি বৃষ্টি অরণ্যের জন্য সারাবছর পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে সেখানে।
এই কুইন্সল্যান্ডের ম্যাকে শহরের ৩৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে রয়েছে কেসউইক দ্বীপ। ঢেউয়ের তোড়ে নানা প্রজাতির কচ্ছপ উঠে আসে সেখানকার সমুদ্রসৈকতে। পর্যটন শিল্পকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে ২০১৯ সালে এই কেসউইক দ্বীপের একটি বড় অংশ ৯৯ বছরের লিজে কিনে নেয় চিনা সংস্থা ‘চায়না ব্লুম’।
তার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। অভিযোগ, চিনা সংস্থার হাতে দ্বীপটি আসার পর থেকেই ওই একখণ্ড ভূস্বর্গে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও বসতি ছেড়ে উঠে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। বহুবছর ধরে ওই দ্বীপে বাস করছেন যে সমস্ত মানুষ, পর্যটকদের বাড়ি ভাড়া দেন তাঁরা। তাঁদের ভাড়াটে তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, কেসউইক এখন চিনের সম্পত্তি হয়ে দাঁডিয়েছে। শুধু তাই নয়, চিনা সংস্থাটি কেসউইক দ্বীপের বাস্তু বৈচিত্র্যেও থাবা বসিয়েছে বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, সমুদ্রসৈকতে নানারকমের পরিকাঠামো বসিয়ে নির্মাণকার্য চালানো হচ্ছে। এর ফলে সেখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত হুইটসানডেজ ওয়েসিসকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। ওই উদ্যানের ২০ শতাংশ চিনা সংস্থার লিজ নেওয়া অংশে পড়ে। ওই এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।দ্বীপের ওই অংশটিতে ঢোকার মুখে নানা ধরনের হোর্ডিংও লাগানো হয়েছে। তাতে লিজ নেওয়া অংশে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ বলে লেখা রয়েছে। স্থানীয়দের সেখান থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
ছ’বছর ধরে ওই দ্বীপে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিলেন এক দম্পতি। তাঁদের অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি মাসে আচমকাই তাঁদের বাড়ি খালি করে দিতে বলা হয়। তার জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র তিন দিন। বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর আবার তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। বলা হয়, তাঁদের হাতে বাড়িটির ক্ষতি হয়েছে। তা মেরামত করতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লিজে দ্বীপের দখল নিলেও, সেটি সরকারি সম্পত্তির আওতায় পড়ে। সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষের প্রবেশ আটকানোর কোনও ক্ষমতা নেই। কিন্তু সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, শুধুমাত্র এশিয়ার ধনকুবেরদের জন্যই দ্বীপটি আগলে রাখা হচ্ছে, যাতে তাঁরা নিভৃতে বেড়াতে পারেন এবং চিন মুনাফা তোলে।
কিন্তু পর্যটনের দোহাই দিয়ে দ্বীপের একটি বড় অংশের দখল নিলেও, বিধিনিষেধের জেরে গত এক বছরে সেখানে পর্যটক সমাগমও সে ভাবে চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার অনেক নাগরিকেরই সেখানে বাড়ি রয়েছে। সেগুলি হোটেল বা রিসর্ট হিসেবে কাজে লাগান তাঁরা। পর্যটকদের নজর কাড়তে এয়ারবিএনবি-র মতো ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনও দেন। কিন্তু তার উপর নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছে ওই চিনা সংস্থা। যে কারণে গত সেপ্টেম্বের থেকে সেখানে মাছি তাড়ানোর মতো অবস্থা।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘চায়না ব্লুম’-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে ‘গ্রেটন হোল্ডিংস’ নামের একটি সংস্থা। সিডনির ডার্লিং হারবারের মতো একাধিক নির্মাণকাজে যুক্ত ছিল তারা। বিষয়টি নিয়ে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে সে দেশের একটি সংবাদমাধ্যম। স্থানীয় বাসিন্দা ও ‘চায়না ব্লুম’-এর মধ্যে একান্তে বিষয়টির মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন বলে জানায় তারা।
এ নিয়ে সে দেশের পরিবেশ এবং বিজ্ঞান বিভাগের কাছেও অভিযোগ জমা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি যদিও, তবে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
তবে শুধু কুইন্সল্যান্ডের কেসউইকই নয়, সেন্ট বিজ, ডে ড্রিমের মতো অস্ট্রেলিয়ার আরও বেশ কিছু দ্বীপ বিভিন্ন চিনা সংস্থার হাতে রয়েছে।
বাংলার বিবেক ডট কম – ৩ ডিসেম্বর, ২০২০
Leave a Reply