বাংলার বিবেক ডেস্ক : ম্যারাথন ইংরেজি শব্দ দূরপাল্লার দৌড় খেলাবিশেষ। দাফতরিকভাবে এ দৌড়ের দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার বা ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ। পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় নগরজীবনে সচরাচর খেলা পরিচালনায় রাস্তা ব্যবহার করা হয়। বিধায় এটি রোড রেস বা রাস্তায় দৌড় খেলা নামে পরিচিত। অলিম্পিক আসরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্টও ম্যারাথন।
নগরজীবনে বাড়ছে দালান। কমছে খেলাধুলার জন্য জমির পরিমাণ। একই সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ডিজিটালের ছোঁয়া। অফিস কিংবা বাইরে বের না হয়ে মোবাইল ফোনে কিংবা কম্পিউটারে দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। মানুষ আগের মতো কায়িক শ্রম করছে না। ডব্লিউএইচওর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, বিশ্বের এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ, অর্থাৎ ১৪০ কোটি মানুষ কোনো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করে না। ২০০১ সাল থেকে এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। শরীর না খাটালে বা পরিশ্রম না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এতে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিসসহ নানারকম ক্যানসার হতে পারে। কায়িক শ্রম কমে যাওয়া ও খেলাধুলার জন্য নগরজীবনে পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় ম্যারাথন দৌড়ের গুরুত্ব বেড়েছে। নিয়মিত একজন মানুষ ম্যারাথন করলে শারীরিক ও মানসিক দুদিক থেকেই সুস্থ থাকেন।
বর্তমানে তরুণরা ঘরে বসে মুঠোফোনে খেলাধুলা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে আনন্দ খুঁজছেন। কর্মক্ষেত্রে বসে বসে কাজ করছে। ঘরে ফেরার পরও কম্পিউটার, মুঠোফোনে কাজ করছে। এসব করে শরীরের চঞ্চলতা অনেকটা বসে গেছে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করছে না। এতে শরীরে অলসতা ভর করছে, ঘুম থেকে দেরিতে উঠছে। প্রকৃতির হাওয়া শরীরে লাগাচ্ছে না।
এতে নানা রোগ জেঁকে বসছে। তরুণ প্রজন্মকে শারীরিক কসরত, বিশেষ করে দৌড়ানোর প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। ম্যারাথান দৌড়ে তরুণ সমাজের সুস্বাস্থ্য যেমন নিশ্চিত করে; তেমনি মাদক থেকে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ম্যারাথন বাংলাদেশে সেই অর্থে প্রচলিত না হলেও দিন দিন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। এতে তরুণ ও বয়স্ক সব বয়সের মানুষ উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। যা কম্পিউটার যুগের একটি ইতিবাচক ঘটনা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় ম্যারাথন খেলা শুরু থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু ১৯২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ খেলার সুনির্দিষ্ট মানদ- ছিল না। কালের পরিক্রমায় মানুষের কাছে ম্যারাথন দৌড়ের গুরুত্ব বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে এখন ম্যারাথন দৌড়ের জন্য প্রতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে ম্যারাথন দৌড়ের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে বিভিন্ন সংগঠন। ম্যারাথন শুধু দৌড়াদৌড়ির প্রতিযোগিতা নয়। এটি শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম।
এ বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের ডা. আবদুস ছালাম বলেন, রাজধানীতে এখন বয়স্ক মানুষের হাঁটাচলার পরিবেশ নেই। মাঠের স্বল্পতার কারণে যোগব্যায়াম পর্যন্ত করতে পারছে না। ম্যারাথন দৌড়ে তরুণ সমাজের সুস্বাস্থ্য যেমন নিশ্চিত করে; তেমনি মাদক থেকে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১২ জানুয়ারি, ২০২১
Leave a Reply