বাংলার বিবেক ডেস্ক : প্রণোদনার প্রথম প্যাকেজে এসএমই খাতের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা সন্তোষজনক না হওয়ায় অর্থ বিতরণের কৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন প্রণোদনা তহবিলের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই) ও বিসিকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিতরণ করবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এবার করোনার দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ সুবিধা পাবেন। এ লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্যাকেজে একটি পৃথক তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে দেশের ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের।
জানা গেছে, করোনার প্রভাব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) সক্ষমতা বাড়াতে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোর অদক্ষতায় সর্বশেষ হিসাবমতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দকৃত ঋণের অর্ধেকও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ে ঋণের জন্য আবেদন এসেছে ৪৬ হাজার ৫৪৩টি। বিপরীতে ঋণ বিতরণের জন্য ৪১ হাজার ৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসএমই খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধার বাইরে থেকে যায়। এ কারণেই নেয়া হয়েছে নতুন উদ্যোগ। দেশে সিএসএমই খাতে প্রায় ৮০ লাখ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে ছোট ছোট লাখ লাখ ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠা রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথম দফায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য। এরই মধ্যে চলে আসে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। এ ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে গত নবেম্বর মাসে প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে দেশী-বিদেশী অর্থ বিশেষজ্ঞরা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার পরামর্শ দেন।
ইতোমধ্যে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় দফা করোনার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। রফতানি আয়ে দেখা দিয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় উৎস রেমিটেন্স নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্পখাত অর্থনীতির প্রাণ। দেশের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। অথচ কুটির শিল্পখাতের লাখ লাখ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ তারা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। এ কারণে দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের এসব ছোট ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ সবাই যাতে পায় সে লক্ষ্যে কিছু নতুন কৌশল গ্রহণ করা হবে। পৃথক তহবিল গঠন করবে সরকার। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা স্বাভাবিক রাখতে সব কিছু করা হবে।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা। বিশেষ করে ২ শ’ উপজেলার সব বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এরই মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সিএসএমই খাতকে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, কুটির, ক্ষুদ্র ও এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও তা দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেয়া প্রয়োজন। প্রথম প্যাকেজের বিষয়টি মাথায় রেখে অর্থ বিতরণ পদ্ধতি নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষকে সরাসরি অর্থ দেয়া ভাল। তবে গুরুত্ব দেয়া উচিত যারা চাকরি হারিয়েছেন। কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, প্রণোদনা প্যাকেজের নতুন তহবিলের অর্থায়ন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়ন করা হতে পারে। এ তহবিলের অর্থ প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবার আড়াই শতাংশ সুদে সেটি বিতরণ করবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা (এমএফআই) ও অন্যান্য ঋণ সংস্থার কাছে। এসব সংস্থা ওই তহবিলের অর্থ গ্রাহককে ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেয়া হবে। তবে তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এছাড়া তহবিল থেকে ৪০ শতাংশ ঋণ দেয়া হবে ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবামুখী অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের। এ তহবিল থেকে একক বা গ্রুপ পর্যায়ে ঋণ নেয়া যাবে। এখান থেকে কুটির শিল্পোদ্যোক্তা পর্যায়ে পাবেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা, ছোট উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং মাঝারিসহ অন্য উদ্যোক্তারা পাবেন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। ঋণ পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবেন যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অধিদফতর, বিসিকসহ সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, বিদেশ বা শহরে ফেরত আসা উদ্যোক্তারা।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১৪ জানুয়ারি, ২০২১
Leave a Reply