অনলাইন ডেস্ক : থাইরয়েড একটি জটিল রোগ। অন্তঃসত্ত্বাদের এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে। সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরপরই নারীদের থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত। তা না হলে সন্তান জন্মদানকালে জটিল সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের থাইরয়েড পরীক্ষা করা অনেক দেশে এখন বাধ্যতামূলক। সন্তান ধারণে অকারণে বিলম্ব বা বারবার গর্ভপাত হলে অবশ্যই এই পরীক্ষা করতে হবে।
গর্ভকালে প্রতি এক মাস-দেড় মাস অন্তর পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা বারবার ঠিক করে নিতে হবে। একটি সুস্থ, নীরোগ ও মেধাবী বুদ্ধিমান সন্তান জন্ম দিতে চাইলে মায়ের থাইরয়েড সচেতনতা অপরিহার্য।
থাইরয়েড কী
এইচ আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থিটি আমাদের গলার সামনে, স্বরযন্ত্রের ঠিক নিচে অবস্থিত প্রায় দুই ইঞ্চির মত লম্বা এবং প্রায় ওজনহীন হয়ে থাকে (এক আউন্সেরও কম)। এটি অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ গঠন করে, যা দেহে হরমোন উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। থাইরয়েড গ্রন্থিটি দুটি মূখ্য হরমোন টি ৩ এবং টি ৪ উৎপাদন করে। থাইরয়েড দ্বারা ক্ষরিত হরমোনগুলো দেহের বিপাক এবং ওজন বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের বিকাশ, শ্বাসকার্য, দেহের তাপমাত্রা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রার মত শরীরের অন্যান্য মূল কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের মাত্রা নিরীক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ভ্রূণের উপর একটি বলার মত প্রভাব ফেলতে পারে যার মধ্যে শিশুর স্নায়ুবিক বৌদ্ধিক ক্ষমতাও অন্তর্ভূক্ত।
থাইরয়েড অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে যে প্রভাব ফেলে
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে যখন কোনো নারী তার গর্ভধারণের মুখ্য সময়ে থাকেন। তবে যদি এটা সঠিক সময়ে নির্ধারণ না করা হয়, এর প্রভাব কিন্তু গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে মারাত্নক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নারীদের মধ্যে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যার হার অনেক বেশি। মুটিয়ে যাওয়া, অবসাদ ও ক্লান্তি, চুল পড়া, ত্বক খসখসে হয়ে পড়া, পা ও মুখ ফোলা, মাসিকের জটিলতা, বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, শীত শীত ভাব ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
আরও যেসব জটিলতা দেখা দেয়
১. গর্ভকালীন থাইরয়েড হরমোনের সামান্য ঘাটতিও গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ের উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. মায়ের এই সমস্যার কারণে পরবর্তীতে শিশু মেধা ও বুদ্ধিতে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে। তাই গর্ভকালীন নারীদের থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
৩. থাইরয়েড হরমোন মাত্রাতিরিক্ত হলেও অতিরিক্ত গরম লাগা, বেশী ঘাম, হাত কাঁপা, বুক ধড়ফড়, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
৪. সময় মতো এই রোগের চিকিৎসা না করালে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া থেকে হার্ট ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে।
৫. থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে, যাকে বলে গলগণ্ড। এমনকি থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারও হতে পারে।
লেখক: ডা. বেদৌরা শারমিন, গাইনি কনসালট্যান্ট,সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেড।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১৬ জানুয়ারি, ২০২১
Leave a Reply