স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী থানাধীন চৌমুহনী মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশি চেকপোষ্ট। প্রতিদিন দিনে ও রাতে শিফট অনুযায়ী এই চেকপোষ্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এই চেক পোষ্টের কার্যক্রম নিয়ে এরইমধ্যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। চেক পোষ্টের পুলিশ সদস্যরা তাদের আইনি কাজের বাইরে গিয়ে বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এমন অভিযোগ অহরহ।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চৌমুহনী অস্থায়ী চেকপোষ্টের পুলিশ সদস্যরা স্থান পরিবর্তন করে পাক ইসলামপুর হাই মেম্বরের বাড়ির সামনে, টাঙ্গন সংলগ্ন হারানের বাড়ির সামনে, ইটভাটার মোড় ও গোবিন্দপুর বটতলায় অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তারা মূলত মাদক অধ্যুষিত চৌমুহনী থেকে টাঙ্গন হয়ে মফস্বল এলাকায় চলাচলকারী বৈধ ও অবৈধ মোটরসাইকেল যাচাইয়ের কাজ করে। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন না থাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকাসহ এ সংক্রান্ত আইনি বিষয়াদী যাচাই করার কথা। কিন্তু এর আড়ালে তারা অবৈধ উৎকোচের বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল ছেড়ে দিচ্ছে। আবার ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও ছেড়ে দিচ্ছে অবৈধ উতকোচ নিয়ে। শুধু তাই নয়, ওই সড়ক দিকে চলাচলকারী মাদকসেবী, যারা নিয়মিত মাদক সেবন করতে যান তাদের কাছ থেকে নিয়মিত উতকোচ নেয়া হয়। এতে করে বৈধ মোটরসাইকেল চালকেরাও বিভিন্ন সময়ে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুলিশের অবৈধ উতকোচ নেয়ার একটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, চৌমুহনী চেকপোষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রিক্সা-ভ্যান মেরাতকারী এক যুবককে তুচ্ছ ঘটনায় মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের মারপিটে আহত যুবকের নাম বিপুল (২০)।
স্থানীয়রা জানান, চৌমুহনী মোড় থেকে টাঙ্গন যাওয়ার পথে এই যুবকের সাইকেল, ভ্যান ও রিক্সা মেরামত করার একটি গ্যারেজ রয়েছে। রোববার (৩১ জানুয়ারী) প্রতিদিনের মত বিপুল গ্যারেজে কাজ করছিলেন। বিকেল ৪ টার দিকে কাটাখালী থানা পুলিশের একটি মাহিন্দ্রা গাড়ি বিপুলের গ্যারেজের সামনে চেকপোস্ট বসায়। গাড়িতে ছিলেন এএসআই আশরাফুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। এসময় বিপুল পুলিশ সদস্যদেরকে বলেন, স্যার প্রতিদিনই তো আমার গ্যারেজের সামনে গাড়ি রাখেন এতে আমার কাজ করতে খুব সমস্যা হয়। তাছাড়া আমার গ্যারেজের জায়গাও খুব কম। যদি দয়া করে গাড়িটা একটু দূরে সরিয়ে রাখতেন তাহলে আমার কাজ করা সুবিধা হতো। আর একথা শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন কনস্টেবল মাহবুব। তিনি ওই যুবককে বলেন, তোর এত বড় সাহস পুলিশের গাড়ি সরিয়ে রাখতে বলিস। থাম তোর গ্যারেজের ব্যবস্থা করছি বলেই বিপুলের গালে কষে চড় বসিয়ে দেন কনস্টেবল মাহবুব।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবল মাহবুব ওই যুবককে মারধরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, বিপুল খুব নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। পুলিশের কাছ থেকে এমন অসদাচরণ কখনো আশা করা যায় না। পুলিশের গাড়ি প্রতিদিন বিপুলের গ্যারেজের সামনে রেখে চেকপোস্টের নামে প্রত্যেক মোটরসাইকেল আরোহীর কাছ থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ গ্রহণ করে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।
জানতে চাইলে কাটাখালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, ওই এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ চেকপোষ্ট রয়েছে, কারণ এলাকাটি মাদকপ্রবণ। পুলিশি টহল ও চেকপোষ্ট না থাকলে মাদক কারবারী ও মাদকসেবীদের ততপরতা বেড়ে যাবে। পুলিশের বিরুদ্ধে উতকোচ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, যাদের আঁতে ঘা লাগে অর্থাত মাদকসেবীরাই সাধারণ পুলিশের বিরুদ্ধে অবৈধ উতকোচ নেয়ার অভিযোগ করে থাকেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উ’কোচ নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিপুল নামে যে যুবককে মারার অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Leave a Reply