অনলাইন ডেস্ক : অমর একুশে পেয়েছে আন্তর্জাতিক মর্যাদা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। এটা বাঙালির গর্বের অর্জন। একুশ শুধু উদযাপনের নয়, একুশ উজ্জীবনের-উদ্দীপনের। একুশ মানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। এমন এক সময় ছিল বাংলা ও বাঙালিকে শাসকদের পক্ষ থেকে নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো। এ কারণে এখানকার একটু শিক্ষিত মানুষ নিজেদের বনেদি প্রমাণ করার জন্য বলত, তাদের পূর্বপুরুষ ইরান কিংবা আফগানিস্তান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে এসেছে। সংস্কৃত ভাষার প-িতরাও বাদ যেতেন না। এই ক্ষোভে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম বলেছিলেন, ‘যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। বস্তুত বাংলা ভাষাকে মাতৃগর্ভের মতো সুরক্ষিত রেখেছে এই অঞ্চলের নি¤œবর্গের মানুষ, যারা নিজেদের আভিজাত্যতা প্রমাণ করার জন্য পরদেশের ঐতিহ্য খুঁজতে যাননি।
সেই ধারাবাহিকতায় অমর একুশের দিনে বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধের ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এই ভালোবাসার জন্য এ হীরণ¥য় দিনের জন্ম দিয়ে বাঙালি প্রমাণ করেছে, নিজেদের ঐতিহ্য আর বিদেশে খুঁজতে হবে না। সেটা নিজ দেশেই খুঁজে বের করতে হবে। তাই অমর একুশের মানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। মায়ের ভাষাকে ছিনিয়ে আনার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৫২ সালের মহান একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাদের সে আত্মদান বাঙালিকে ঘরে ফিরিয়েছে; যা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
ইতিহাসের শরণাপন্ন হলে এ কথা বলতেই হবে, ব্রিটিশ আমলেই ব্রিটিশমুক্ত ভারতে লিঙ্গুয়া¯্রাঙ্কা হিসেবে হিন্দি-উর্দুর পাশাপাশি বাংলার প্রস্তাব করেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ভাষা আন্দোলনের অনিবার্য সুফল হিসেবে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের ঘোষণা দেয় ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক আবুল কাসেমের সম্পাদনায় তমুদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু শিরোনামে একটি বই বের হয়। তখন তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও গঠিত হয়। এ পরিষদ নানা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করে।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মজলিসের উদ্যোগে ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ ধর্মঘট এবং প্রদেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১১ মার্চ একটি মাইলফলক। এ ধর্মঘটের কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এগিয়ে আসেন এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৭ দফা চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এ চুক্তিতে উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষাকেও সমান মর্যাদা প্রদান এবং পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ফলে এ দেশের মানুষ ধরে নিয়েছিল তারা তাদের মুখের ভাষার মর্যাদা ফিরে পাবে। কিন্তু সরকার অচিরেই এ দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করল। ১১ মার্চ থেকে ২১ মার্চের মধ্যেই পালটে গেল দৃশ্যপট।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
Leave a Reply