অনলাইন ডেস্ক : অগ্নিঝরা মার্চের ষষ্ঠ দিন আজ। প্রদেশে প্রথম কারা বিদ্রোহ ঘটে এ দিন। বেলা ১১টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙে বেরিয়ে আসেন ৩৪১ কয়েদি। কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রহরীদের গুলিতে নিহত হন সাত কয়েদি। আহত হন ৩০ জন। খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১৮ জন এবং আহত হন ৬৪ জন। এ দিনেও দেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এদিকে দিন যতই গড়াচ্ছিল, অসহযোগ আন্দোলনের গন্তব্যও ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর চাপ পূর্বের চেয়ে আরও বেড়ে চলছিল। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু কী ভাষণ দেবেন তা শোনার জন্য সারাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল।
এরই মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এসএম আহসানকে অপসারিত করেন ইয়াহিয়া খান। তার স্থলে নতুন গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে। পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দেন। বেতার ভাষণে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আমি আগামী ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই আমি ২৫ মার্চ ঢাকা জাতীয় পরিষদের প্রস্তাবিত অধিবেশন আহ্বান করলাম।’ এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও স্বাধিকার আন্দোলনের সমর্থনে এদিন রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষাবিদ, শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ও নারী পুরুষসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ওয়ালী), পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস, পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতি, মহিলা সমিতি, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলসহ অন্যান্য দল ও সংগঠনের নেতারা পৃথক বিবৃতিতে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সমর্থন জানান। জাতীয় লীগ নেতা অলি আহাদ স্বাধিকার আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য জনসভা থেকে শেখ মুজিবের প্রতি আহ্বান জানান।
ওদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগের ছয় দফার ব্যাপারে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। পূর্ববাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন মধ্যরাত পর্যন্ত দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও সমমনা বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে ৭ মার্চের জনসভার প্রস্তুতি এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করে দিকনির্দেশনা দেন।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আ স ম আবদুর রব, জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোনো অবস্থাতেই খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানো চলবে না। আন্দোলন-সংগ্রাম বন্ধ করার জন্য পাক সেনাবাহিনীকে গ্রেফতার, নির্যাতন, জেল-জুলুম বন্ধ করতে হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জোর প্রস্তুতি গ্রহন করে ৭ মার্চের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে। ঢাকা শহর ও এর আশপাশে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। মানুষ বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার জন্য টান টান উত্তেজনা নিয়ে সময়ের প্রহর গুনতে থাকে। অপরদিকে, ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী ঘোষণা দেবেন তা ঠিক করতে বঙ্গবন্ধু দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জনগণের আকাক্সক্ষা অনুসারে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে কি না সেটাই ছিল প্রশ্ন। তবে এদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ভেসে ওঠে প্রতিরোধের নির্দেশ। এদিন তিনি বলেন তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হও।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply