অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কানেকটিভিটি দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছি। আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি যেখানে কানেকটিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীলতা ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেন, উদ্বোধন করা সেতুটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যোগাযোগের নতুন ধারা উন্মোচন করবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো নৌসেতুর মাধ্যমে যুক্ত হলো বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দেশকে বিভক্ত করা ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি ত্রিপুরার সাবরুম ও খাগড়াছড়ির রামগড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
মৈত্রী সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করছি আমরা যে কাঠামোটি উদ্বোধন করছি তা কেবল ভারতের সঙ্গে নয়, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গেও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করবে। আমরা প্রমাণ করব রাজনৈতিক সীমারেখা উন্নয়ন ও বাণিজ্যে বাধা হতে পারে না।’
২০১৫ সালের ৬ জুন ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন দুই দেশের মধ্যকার প্রথম এই মৈত্রী সেতুর। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কাজ বাধাগ্রস্ত হলেও এ মাসের শুরুতেই সেতুর সব কাজ শেষ হয়ে যায়। এ মাসেই মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এর দুই সপ্তাহ আগেই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে সেতুটি উদ্বোধন করলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড ভারতীয় অর্থায়নে এটি নির্মাণ করেছে। এই সেতুকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সহযোগিতার স্মারক হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দুই দেশের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সেতুকে দুই দেশের মধ্যে নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য, মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। আর এই মৈত্রী সেতুর কারণে ত্রিপুরা হয়ে উঠল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নর্থ-ইস্টে পৌঁছানোর গেটওয়ে।
১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে। সেতুটি ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ফলে বন্দর থেকে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মৈত্রী সেতু এমন এক সময় উদ্বোধন করছি যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতমবর্ষ উদ্যাপন করছি। ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভুলি নাই— ১৯৭১ সালে কীভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply