অনলাইন ডেস্ক : আজ ২০ মার্চ। একাত্তর সালের এদিন ছিল খুব টালমাটাল। একদিন আগে ঢাকার অদূরে গাজীপুর ও জয়দেবপুরে সংগঠিত জনতার সশস্ত্র আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে শহর, পাড়া ও মহল্লায়। সকাল থেকে মিছিলের ঢল নামে ঢাকার অলিগলি, এমনকি দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছুটে আসেন মুক্তিকামী জনতা। সেখানে সভা-সমাবেশ চলে দিনভর। অন্যদিকে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়া-মুজিবের চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠক-আলোচনার আড়ালে জনতার আন্দোলন থামাতে কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত থাকেন পাকিস্তানি শাসকরা। এ দিন তারা অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।
২০ মার্চ আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ দফা বৈঠক। এ বৈঠক চলে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। বৈঠকে উভয়পক্ষের উপদেষ্টারা অংশ নেন। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন, আমাদের আলোচনা এগিয়ে চলছে। আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই। সময় এলে আমি অবশ্যই বিস্তারিত বলব। বৈঠকে শেখ মুজিবুরের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন।
আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে সহায়তা করেন বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা এবং কর্নেল হাসান। অন্যদিকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রধান খান আবদুল ওয়ালী খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সম্পাদক মাওলানা মুফতি মাহমুদ, পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগ সভাপতি সরদার শওকত হায়াত খান, পশ্চিম পাকিস্তান ওয়ালী ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গাউস বখত বেজেঞ্জো আর ক্যাম্বেলপুর থেকে নির্বাচিত কাউন্সিল লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য পীর সাইফুদ্দিন এদিন সকালে মিয়া দৌলতানার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল-কক্ষে এক বৈঠকে মিলিত হন।
২০ মার্চে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে সাবেক নৌ সেনারা স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠন করতে তারা সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে তারা মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ঢাকার ধানমন্ডির বাসভবনে যান।
সকালে সামরিক কায়দায় বন্দুক উঁচিয়ে রাজপথে মিছিল করে ছাত্র ইউনিয়ন। মিছিলের সময় পথের দু’পাশে হাজারও মানুষ করতালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান। সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে ছাত্র ইউনিয়ন গণবাহিনীর প্রথম শিক্ষাশিবিরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই তারিখে শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে জনগণের প্রতি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য জনগণ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তাই মুক্তির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে এ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে আমি বাংলাদেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাই। এবারের সংগ্রাম প্রতিটি শহর, নগর, বন্দর ও গ্রামে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বাংলাদেশের দাবির পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ, সারা বিশ্বের স্বাধীন জাতি কীভাবে স্বীয় লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে পারে, বিশে^র সামনে বাংলার মানুষ আজ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply