স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তারা রাজশাহীতে একটি পার্কে পিকনিক করতে আসছিলেন। একজন বেঁচে থাকায় মাইক্রোবাসে চালকসহ মোট ১৮ জন ছিলেন।
এদের মধ্যে বেঁচে আছেন শুধু পাভেল (২৭) নামে একজন। তিনি এখন রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। দুর্ঘটনায় তার বাবা মোখলেসুর রহমান (৪৫) ও মা পারভীন বেগম (৪০) নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি পীরগঞ্জের ডারিকাপাড়া গ্রামে।
এছাড়া নিহত হয়েছেন পীরগঞ্জের রাঙ্গামাটি গ্রামের মো. সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২), শামসুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৩৭), উপজেলা সদরের মো. ভুট্টু (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০), ছেলে ইয়ামিন (১৫), বড় মজিদপুরের ফুলমিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫) এবং মেয়ে সুমাইয়া (৮), সাবিহা (৩), দুরামিঠিপুরের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম (৪৬) এবং মাইক্রোবাসের চালক মো. হানিফ (৩০)। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পঁচাকান্দ গ্রামে।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কাপাশিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পর মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে মাইক্রোবাসের আগুন গিয়ে পড়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লেগুনায়। এ দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জনই মারা গেছেন।
শনিবার সকালে রামেক হাসপাতালে লাশ নিতে আসেন স্বজনেরা। আসেন নিহত শহীদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হুদাও (২০)। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন প্রথম বর্ষে। নাজমুল জানান, উপজেলা সদরে ব্যবসার সুবাদে সবার সঙ্গে সবার বন্ধুত্ব। তারা সবাই প্রতিবছর একসঙ্গে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যেতেন। করোনার কারণে বেশকিছু দিন তাদের বেড়ানো হয়নি।
তাই তারা রাজশাহীতে পিকনিক করার জন্য আসছিলেন। নাজমুল বলেন, খবরটা দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেই দেখি। টিভি খুলে দেখি একই নিউজ দেখাচ্ছে। এরপর আব্বাকে ফোন করি। নম্বর বন্ধ পাই। গাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কয়েকজনকে ফোন করে দেখি তাদের নম্বরও বন্ধ। তখন মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবু আসলামকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিলে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা যাবে। আর সরকারি খরচে লাশগুলো পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
নগরীর কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মতিয়ার রহমান জানান, এ ব্যাপারে কাটাখালী থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিলে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক গ্রেফতার : এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুর্ঘটনা কবলিত বাসের চালক মো: আব্দুর রহিমকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে বেলপুকুর থানার মাহেন্দ্রা বাইপাস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পিতার নাম মো. ফজলুলহক। তার বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরএমপি পুলিশে মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস।
বাংলার বিবেক/ ইএবি
Leave a Reply