অনলাইন ডেস্ক : সিলেটের বিশ্বনাথে মখলিছুন বেগম (৩২) নামে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের বাবার দাবি, তার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে অন্য এক সূত্র জানিয়েছে, ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় আটক ২ বৃদ্ধকে রোববার (২২ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মখলিছুন বেগম। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মখলিছুন বেগম স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। বাবা দরিদ্র হওয়ায় মখলিছুন লামাকাজি বাজারের নৈশপ্রহরী মির্জারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কমলা মিয়ার বাসায় বেশ কিছুদিন ঝিয়ের কাজ করেন। এর সুবাদে কমলা মিয়া তার সত্তরোর্ধ্ব বেয়াই উপজেলার সত্তিশ গ্রামের রইছ আলীর সঙ্গে তাকে (মখলিছুন) বিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটেন।
নানা প্রলোভন দেখিয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রইছ আলীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় মখলিছুনকে। বিয়ের চার দিনের মাথায় রইছ আলী জানতে পারেন তার নব-বিবাহিতা স্ত্রী মখলিছুন বেগম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে দুই বেয়াই মিলে মখলিছুনকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গর্ভপাত করাতে যান।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রইছ আলী মখলিছুন বেগমকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তাকে পিতার বাড়িতে রেখে যান দুই বেয়াই।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে মখলিছুন বেগমের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় ফের হাসপাতালে পাঠান তার বাবা। ওইদিন রাতেই কমলা মিয়া ও তার বিয়াই রইছ আলীকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মখলিছুন বেগম। তখন তার বাবা আব্দুস সালাম স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে মামলা দায়ের করতে বিশ্বনাথ থানায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে একজন অজ্ঞাতনামা নারী অভিভাবক পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ নিয়ে লামাকাজীর উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং পথিমধ্যে মদিনা মার্কেট এলাকায় ওই অজ্ঞাতনামা নারী অ্যাম্বুলেন্স রেখে পালিয়ে যান।
এরপর রাত ১২টার দিকে মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালাম থানায় অবস্থানকালে হঠাৎ খবর পান, লামাকাজীতে একজন নারীর লাশ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করছে। পরে সেটি স্থানীয় জনতা আটক করে রাখেন।
খবর পেয়ে মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালাম লামাকাজীতে গিয়ে মখলিছুনের লাশ শনাক্ত করেন। পরে রোববার (২২ আগস্ট) সকালে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
মখলিছুন বেগমের বাবা আব্দুস সালাম জানান, মেয়েকে বাড়িতে রেখে চাকরি সূত্রে তিনি সিলেট শাহপরাণ এলাকায় থাকেন। আর এই সুযোগে তার অজান্তেই মেয়ে মুখলিছুন বেগমকে কমলা মিয়ার সঙ্গে অবৈধভাবে বিয়ে দেন রইছ আলী। বাড়ির একজন মহিলার মাধ্যমে গত শুক্রবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা রাতে তিনি খবর পান তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ।
খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে গিয়ে দেখেন মখলিছুন বেগম বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন। আব্দুস সালাম তৎক্ষণাৎ স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালামকে খবর দিলে রাত ১০টার দিকে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তার মেয়ে মখলিছুনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আব্দুস সালাম।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মখলিছুনকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা বা তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply