অনলাইন ডেস্ক : আল্লাহর জন্য ভালোবাসার আজর বা পুরস্কার
১/ আল্লাহর জন্য আল্লাহর দ্বীনদার বান্দাদেরকে ভালোবাসার সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো- আল্লাহর প্রেম ও আরশে আজিমের ছায়া লাভ করা। যেদিন মহান রব্বে করিমের আরশে আজিমের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেই কঠিনতম বিপদের দিনে আল্লাহ তা’আলা নিজ অনুগ্রহে যেই সাত গ্রুপ কোয়ালিটি বান্দাদেরকে আরশের ছায়া প্রদান করবেন তন্মধ্যে একটি গ্রুপ হলো-
অর্থাৎ ‘এমন দুজন ব্যক্তি; যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য পরস্পরে একত্রিত হয়, আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই পৃথক হয়।-(বুখারী, মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন- যারা আমার মর্যাদায় একে অপরকে ভালোবাসত তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়া প্রদান করব, যে দিনে আমার দেওয়া ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া নেই। (মুসলিম)
২/ যাদের দেখে নবীগণ ও শহীদগণ ঈর্ষান্বিত হবেন। যে দিবসে মানুষরা থাকবে বিপদে, তখন তারা থাকবে নিরাপদে। যখন লোকেরা থাকবে চিন্তিত, তখন তারা থাকবে নিশ্চিন্ত। অথচ, তারা নবীও নন, শহীদও নন। কিয়ামতের দিন তাদের চেহারাসমূহ হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের ও মণি-মুক্তার মেম্বারে অবস্থান করবেন। তারা কারা? যারা শুধু আল্লাহর মুহাব্বতে একে অপরকে মুহাব্বত করেছে (ভালোবেসেছে)। (সূরা ইউনুস, ৬২নং আয়াতে তাফসীরে ইবনে কাছীর)
৩/ আল্লাহ তা’আলার মুহাব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাদিসে কুদসিতে মুয়াজ ইবনে জাবাল বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন! যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার সন্তুষ্টির জন্যই পরস্পরের সঙ্গে মজলিস বা বৈঠক করে তাদের জন্য আমার মুহাব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়।
৪/ যখন কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো জনপদে তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে যায়, তখন আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা’য়ালা তার চলার পথে একজন সম্মানিত ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। অতঃপর সে যখন তার (ফেরেশতার) নিকটে আসে। ফেরেশতা বলেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? সে তখন বলে, আমি এই গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। ফেরেশতা বলেন! তার কাছে কি তোমার কোনো বেনিফিট আছে যা তুমি পেতে চাও? সে বলে- না। তবে আমি তাকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসি। ফেরেশতা বলেন- আমি তোমার নিকট আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত দূত। যেরূপ তুমি তাকে ভালোবাসো আল্লাহ তা’আলাও তোমাকে ভালোবাসেন। (সহীহ মুসলিম)
৫/ ‘যে কোনো বান্দা আল্লাহ তা’আলার জন্য অপর কোনো বান্দাকে ভালোবাসল, সে তার আপন রবকে সম্মান করল।’ (শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ)
৬/ দুইজন ব্যক্তি যখন একে অপরকে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই ভালোবাসে, তখন উভয়ের মধ্যে যে অপরকে বেশি ভালোবাসে সেই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
৭/ আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ফলে ইমানের স্বাদ চাখা সম্ভব। ‘যে ব্যক্তি ইমানের স্বাদ উপভোগ করতে চায় সে যেন অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে।’ (হাকিম আল মুস্তাদরাক)
কার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা উচিত? আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা সত্যবাদী, মুত্তাকী (পরহেজগার), ধৈর্যশীল, সৎ সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা পছন্দ করেন। কাজেই আমি যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছি সে ইমানদার নাকি বেঈমান? সে আল্লাহকে ভয় করে নাকি উদাসীন? এই খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না এবং তোমার খাদ্য মুমিন ছাড়া অন্য কেউ যেন না খায়। (আবু দাউদ, তিরমিজি) তাছাড়াও আমি যাকে ভালোবাসি আখিরাতে আমার তার সঙ্গেই হাশর-নশর হবে। কাজেই প্রিয় ভাইয়েরা! এমন কাউকে বন্ধু বানাবেন না, যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে কিয়ামতের কঠিনতম ভয়াবহ মুসিবতের দিনে আফসোস করতে হবে।
মুত্তাকী (পরহেজগার), সত্যবাদী, মুমিন, সৎসঙ্গী ছাড়া অসৎসঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনকারীরা সেদিন আফসোস করে বলবে- ‘হায় আমার দুর্ভাগ্য (আফসোস), আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (২৫ঃ২৮) এখান থেকেই উপলব্ধি করলে জানা যায় যে, যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ, মানুষ সৎ সঙ্গে ভালো ও অসৎ সঙ্গে খারাপ হয়ে যায়।
বেশিরভাগ লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ অসৎ বন্ধু ও খারাপ সঙ্গীদের সঙ্গে উঠাবসা। সেজন্য হাদিসে সৎ সঙ্গী গ্রহণ এবং অসৎ সঙ্গী বর্জন করার ব্যাপারকে (আতর-ওয়ালা ও কামারের সঙ্গে) দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। (মুসলিম) কবির ভাষায় ইতি টানছি- ‘কখনো অলসের সঙ্গী হয়ো না। কারণ, অনেক ভালো লোক অপরের দুষ্কর্মের দরুন নষ্ট হয়ে যায়।’
‘নির্বোধের নির্বুদ্ধিতার প্রভাব বুদ্ধিমানের ওপর খুব দ্রুত পড়ে। যেমন জলন্ত অগ্নি অঙ্গার ছাইয়ের ওপর রাখা হলে তা নিভে যায়।’
লেখক: মুহা. জাকিরুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, জামিয়াতুল কুরআনিল কারীম, পাকশী, ঈশ্বদী, পাবনা।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply