অনলাইন ডেস্ক : অপরাধীদের তথ্যভাণ্ডার না থাকায় অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হন। বিনা অপরাধে অনেকে জেলও খাটেন। এ সমস্যার সমাধানে প্রকৃত আসামি শনাক্তে ‘বায়োমেট্রিক’ পদ্ধতি চালু করে দেশের সব থানা ও কারাগারে আসামিদের এবং অভিযুক্তদের আঙ্গুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করতে পর্যবেক্ষণসহ নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গ্রেফতারের পর আসামি বা অভিযুক্তের সম্পূর্ণ মুখের ছবি (মাগশট ফটোগ্রাফ) নিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন আদালত।
আদালত বলেছেন, বায়োমেট্রিক করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এসব বাস্তবায়ন করা দরকার। আইনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে তদন্তসহ এ সংক্রান্ত কাজে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আসবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘গ্রেফতারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ করতে হবে। শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে বিদ্যমান শনাক্তকরণ ফরমে আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি যুক্ত করার বিধান প্রবর্তন করতে হবে এবং তা কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া দেশের সব কারাগারে আঙ্গুলের ছাপ (ফিংগার প্রিন্ট), হাতের তালুর ছাপ (পাম প্রিন্ট) ও চোখের মণি (আইরিশ) স্ক্যানিং ব্যবস্থাযুক্ত বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে।’
শিশির মনির পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিজিটাল সিস্টেম বা বায়েমেট্রিক সিস্টেম চালু করা হলে আমাদের দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অবশ্যই উন্নতি হবে এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে চলতে পারব। তারপরও যদি ঘটে সেটা খুবই নগণ্য হবে। অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার খিলগাঁও থানায় নাশকতার মামলায় পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের মোদাচ্ছের আনছারী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন।
ওই বছরের ৩১ অক্টোবর জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যান মোদাচ্ছের। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেন। এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
জহির উদ্দিন ওই গ্রেফতারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। পরে আদালত প্রকৃত আসামি নির্ণয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নন। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply