স্টাফ রিপোর্টার : পঞ্চগড়ে শেষবারের মতো মা পঞ্চমী বেওয়ার (৯০) লাশ দেখতে এসে আহাজারি করে দুই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের খলিফাপুর এলাকায় মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বার্ধক্যজনিত জটিলতা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে মারা যান পঞ্চমী বেওয়া। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্বজনেরা। স্বামীর বাড়ি থেকে মাকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন ছয় মেয়েও। পরে মায়ের মৃত্যুশোকে অচেতন হয়ে পড়ায় সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান পঞ্চমীর ছোট মেয়ে চৈতী রানী (৩০) ও বড় মেয়ে স্বরজনি বালা (৫০)।
পঞ্চমী বেওয়া ছয় মেয়ে ও দুই ছেলের মা ছিলেন। মারা যাওয়া বড় মেয়ে স্বরজনি বালা বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার সুশীল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ও ছোট মেয়ে চৈতী রানী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফারাবাড়ি এলাকার পলাশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
পঞ্চমী বেওয়ার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকারিয়া হাবিব বলেন, মঙ্গলবার সকালে পঞ্চমী বেওয়া মারা যাওয়ার পর তার ছয় মেয়েই স্বামীর বাড়ি থেকে মায়ের লাশ দেখতে আসেন। মেয়েরা দিনভর মায়ের জন্য আহাজারি করেন। বিকালে পঞ্চমীর লাশ বাড়ির পাশের শ্মশানে সৎকার শেষ করে স্বামীর বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করে অচেতন হয়ে পড়েন ছোট মেয়ে চৈতী রানী।
এ সময় তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনেরা। ওই মাইক্রোবাসে পঞ্চমীর বড় মেয়ে স্বরজনি বালাও যাচ্ছিলেন ছোট বোনকে চিকিৎসক দেখাতে। পথে স্বরজনি বালাও অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা সাতটার দিকে মাইক্রোবাসে দুই বোন মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মারা যাওয়া পঞ্চমী বেওয়ার নাতি কামিনী কুমার রায় বলেন, ‘গতকাল সকাল আটটার দিকে দাদি মারা যাওয়ার পর তার ছয় মেয়েসহ আমাদের স্বজনেরা বাড়িতে আসেন। এরপর সৎকার শেষ করে আমার পিসিরা (ফুপুরা) বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় ছোট পিসি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় বড় পিসিও ওই মাইক্রোবাসে উঠে কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দুজনই পথেই মারা যান। তারপর আমরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য। এ ঘটনায় আমরা হতবাক। স্বজনদের কারোরই কান্না থামছে না।’
বিষয়টিতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর ওই দুই বোনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের স্বজনদের ভাষ্য, ওই দুই নারী হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। মায়ের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে হার্টের সমস্যা থেকেই তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলার বিবেক ডট কম – ১১ নভেম্বর, ২০২০
Leave a Reply