স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলের নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে মাদক সংশ্লিষ্টতার। যা রেল কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত ২৩ আগষ্ট পশ্চিমাঞ্চল রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হাবিলদার নুরে আলম (এইচ-নাম্বার – ৬৬০) এর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয় রাজশাহীর স্থানীয় কয়েকটি নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। যার শিরোনাম হয় “ফেন্সিডিল খেয়েই দেড় লাখ টাকার দেনা রাজশাহী রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মীর”। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে ২৯ আগষ্ট রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলের চীফ কমান্ড্যোন্ট আশাবুল ইসলাম অভিযুক্ত ব্যক্তি নুর আলমের ডোপটেষ্টের আদেশ দেন। অর্থাৎ সংবাদ প্রকাশের ৬ দিন পর।
পরে রেল হাসপাতালের চীফ মেডিকেল অফিসার ( সিএমও) বরাবর ডোপটেষ্টের জন্য লিখিত চিঠি পাঠান । কিন্তু এই ডোপটেষ্ট নিয়ে শুরু হয় নাটকীয় পরিক্ষা। কারন রেল হাসপাতালে পরিক্ষা করার কোন ল্যাব নেয়। তাই ২৯ আগষ্ট ডোপটেষ্টের আদেশ দিলেও ৮ সেপ্টেম্বরে অর্থাৎ আরও ১১ দিন পর রাজশাহী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে (প্রাইভেট) তা পরিক্ষা করানো হয়। আর রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। এখন দেখার বিষয় এই রিপোর্টটি কতটুকু গ্রহনযোগ্য! কেনই বা সিএমও এত দেরি করলো আর কেনই বা তিনি অভিযুক্তকে হাজির হতে বললেন না?
এদিকে রেলওয়ের একটি নির্ভরযোগ্য বলছে, সংবাদ প্রকাশের পর তদন্তের ভয়ে নূরে আলম নিজেকে বাঁচাতে বাদ দেন মাদক সেবন। তার বডিতে ডোপটেষ্টে পজেটিভ না আসে সে কারনে শুরু করেন নিয়মিত লেবু পানি, গ্লকোজ ও ডাব খাওয়া। আর এ কারণে ডোপটেষ্টের নামে কালক্ষেপন করে প্রায় ১১ দিন সময় পার করেন হাবিলদার নূরে আলম।
উল্লেখ্য এর পূর্বে নূরে আলমের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ পেয়েও অজ্ঞাত করণে ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ।
শুধু তাই নয় নূরে আলমের খুটির জোরেই রয়েগেছেন রাজশাহীতে। শুধু তাই নয় তাকে বদলি করা হয়েছে রেলওয়ের গুত্বপূর্ণ ষ্ট্রংরুমে। ওই রুমে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশন থেকে সিন্দুকের মাধ্যমে আসে কোটি কোটি টাকা। আর এ টাকার নিরাপত্তার দায়ীত্বে রয়েছেন হাবিলদার নুরে আলম। এখন প্রশ্ন রয়েই যায় নূরে আলমের মত একজন মাদক সেবনকারীর কাছে কতটুকু নিরাপদ এ ষ্ট্রংরুম!
সুত্রটি আরো জানায়, নূরে আলম রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, আমার বিরুদ্ধে যতই সংবাদ প্রকাশ হোকনাকেন আমার কিছুই করতে পারবেনা কর্তৃপক্ষ। কারণ কতৃপক্ষ তার হাতের মুঠোয়। তাহলে কি বুঝা যাচ্ছে নূরে আলম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহাতায় বিস্তর অভিযোগ থাকা সর্তেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কি সেই কর্মকর্তাদের খুটির জোরে বিভিন্ন অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি।
এবিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,বর্তমানে মাদক নিয়ে সরকারের পাশাপাশি এখন অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ডোপটেষ্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ডোপটেষ্ট দুই ধরনের হয়। একটি Urine (মুত্র), আরকটি Blood (রক্ত)। Urine পরিক্ষাটি অবশ্যই সেবনের ৭২ ঘন্টার মধ্যে করতে হবে আর Blood এর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে করা যায়। তবে ফেন্সিডিলের ক্ষেত্রে একটু গুরুত্ব দিতে হবে কারন এটি পানীয় পদার্থ। এটি সেবনের পরে যদি কোন সেবনকারি অতিরিক্ত পানি বা জুস জাতীয় খাবার খাই তাহলে রিপোর্টে নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা থাকে।
তাই ফেন্সিডিল সেবনকারিকে যতদ্রুত সম্ভব Urine নিয়ে পরিক্ষা করাতে হবে। কিন্তু ডোপটেষ্ট নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই চীফ কমান্ডেন্ট আশাবুল ইসলামের।
এরপরও ২৩ আগষ্ট পশ্চিমাঞ্চল রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ এবং তার ডোপটেস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডোপটেষ্টের জন্য রেল হাসপাতালের চীফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) বরাবর পাঠিয়েছি। রিপোর্ট কি এসেছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান এবং বলেন রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি। এতদিন হলো রিপোর্ট কেন আসেনি এবং কবে ডোপটেষ্টের জন্য পাঠিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন আপনি সিএমও এর নিকট জানতে পারেন।
পরে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিএমও দপ্তর থেকে চীফ কমান্ডেন্ট বরাবর ডোপটেস্ট রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে। তাহলে এখন প্রশ্ন! চীফ কমান্ডেন্ট কি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? তবে এই নিয়ে কোনভাবেই মুখ খুলতে রাজি হননি অভিযুক্ত নুর আলম। অবশেষে সকল বিষয় নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) মিহির কান্তি গুহ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বাংলার বিবেক / এফ কে
Leave a Reply