আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্যালেস্তাইনের দীর্ঘদিনের দাবিকে কার্যত পাত্তা না-দিয়েই সে বার জেরুসালেমকে শুধু ইজরায়েলের রাজধানী বলে ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার তিন বছরের মাথায় গতকাল সেই ইজরায়েলেরই দখলকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ইহুদি বসতিতে গিয়ে নয়া বিতর্ক উস্কে দিলেন তাঁর পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেয়ো।
এই প্রথম কোনও আমেরিকান পররপষ্ট্র সচিব বিতর্কিত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে পা রাখলেন। আর গিয়েই বললেন, ‘‘ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে তৈরি হওয়া যে কোনও পণ্য ‘মেড ইন ইজ়রায়েল’ হিসেবেই বিদেশে রফতানি হওয়া উচিত। কারণ এই ভূখণ্ড ইজরায়েলেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’ সঙ্গে পম্পেয়ো এ-ও জানান, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলের বসতি সম্প্রসারণকেও আর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে মনে করবে না ওয়াশিংটন। গত বছর নভেম্বরে ঠিক এমনটাই বলেছিলেন ট্রাম্প। তাঁর পাঠানো পররাষ্ট্র সচিবের মুখে ফের সেই সুর শুনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে প্যালেস্তাইন তথা আরব দুনিয়ার একটা বড় অংশে।
কাল পম্পেয়োর সফরতালিকায় ছিল বিতর্কিত ‘গোলান হাইট্স’-ও। সিরিয়ার থেকে ১৯৬৭ সালে এই অংশটি দখল করে ইজরায়েল। বাকি বিশ্বও একে বিতর্কিত এলাকা বলে মনে করে। পম্পেয়ো কিন্তু ইজরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গাবি আশকেনাজি-কে পাশে দাঁড় করিয়েই বললেন, ‘‘এত বিতর্কের কী আছে? গোলান হাইট্স তো ইজরায়েলেরই!’’
পম্পেয়ো ইজরায়েল সফরে এলে যে এই ওয়েস্টে ব্যাঙ্কে আসতে পারেন, গত সপ্তাহ থেকেই এমন জল্পনা শুরু হয়েছিল। তখনই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কায় পম্পেয়োর সফর-পরিকল্পনার নিন্দায় সরব হয়েছিল প্যালেস্তাইন। আশঙ্কাটা মিলে গেল। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্টের তরফে শেষবেলায় এমন বিতর্ক কেন বাধিয়ে গেলেন পম্পেয়ো?
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, সবটাই সাজানো ছক। এখনও ভোটে হার স্বীকার করেননি ট্রাম্প। ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়েও জটিলতা তৈরি করছেন। তাঁর হয়ে ব্যাট করতে নেমে পম্পেয়োও সম্প্রতি বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। কিন্তু শেষমেশ হয়তো জেদ করে হোয়াইট হাউস আঁকড়ে থাকা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেটা বুঝেই ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখার আয়োজনে মগ্ন ট্রাম্প।
ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের বিতর্ক মেটাতে একাধিক আলোচনায় মধ্যস্থ করা হানান আশরাউয়ি বলেন, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে আরও এক বার উস্কানিমূলক মন্তব্য শুনলাম।’’ গোলান হাইট্সে গিয়ে পম্পেয়ো বলেন, ‘‘ভাগ্যিস এই অংশটা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ প্রশাসনের কব্জায় নেই। থাকলে, ইজরায়েল তো বটেই, পশ্চিমী দুনিয়ার পক্ষেও পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াত।’’ সিরিয়া জানিয়েছে, যাওয়ার আগে আরও এক বার অশান্তি ছড়িয়ে দিয়ে গেল ট্রাম্প প্রশাসন।
বাংলার বিবেক ডট কম – ২১ নভেম্বর, ২০২০
Leave a Reply