1. admin@zzna.ru : admin@zzna.ru :
  2. md.masudrana2008@gmail.com : admi2017 :
  3. info.motaharulhasan@gmail.com : motaharul :
  4. email@email.em : wpadminne :

উন্নত বিশ্বে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসছে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২
  • ১৫০ বার
উন্নত বিশ্বে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসছে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে
ফাইল ফটো

অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট সারা বিশ্বের উত্পাদকের দেওয়া শত শত কোটি ডলার মূল্যের পণ্য কেনার আদেশ বাতিল করেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ওয়ালমার্টকে পণ্য সরবরাহকারী ঐসব কোম্পানি।

যুক্তরাষ্ট্রে বছরের যেসব সময়ে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হয়, তার মধ্যে ‘ব্যাক টু স্কুল’ মৌসুম অন্যতম। গ্রীষ্মের লম্বা ছুটি কাটিয়ে এ সময়ে সব শিক্ষার্থী স্কুলে ফেরে। ফলে তাদের পোশাকসহ নতুন সব পণ্য কিনে দেন অভিভাবকেরা। এ জন্য অভিভাবকেরা বিভিন্ন ধরনের মূল্যছাড় খোঁজেন। সেই সুযোগ কাজে লাগানোর প্রত্যাশায় উত্পাদকদের কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য বাড়তি ক্রয়াদেশ দেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে এবারের পরিস্হিতি একটু ভিন্ন। মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ভোক্তারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে লক্ষ্য অনুসারে নিয়মিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না দেশটির খুচরা বিক্রেতারা। ভোক্তা চাহিদা কমার সঙ্গে সমন্বয় করতে তাই উত্পাদকদের কাছ থেকে কম পরিমাণে পণ্য কিনছে এসব কোম্পানি। ওয়ালমার্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তাদের ইনভেনটরি পর্যায়ের ক্রয়াদেশ ২৬ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি বিক্রির চাহিদা। এতে তারা বিপাকে পড়েছে। একই ধরনের সংকটে পড়েছে ওয়ালমার্টের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি টার্গেট করপোরেশনও। তাদের অবস্হা ওয়ালমার্টের চেয়েও খারাপ। মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি ত্রৈমাসিকে ভোক্তারা কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় এমন পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ওয়ালমার্টের এই পদক্ষেপে ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিভিন্ন দেশের সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের বড় ক্রেতাদের একটি হলো ওয়ালমার্ট। তাই প্রতিষ্ঠানটি এ দেশেও কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্হগিত করেছে বলে জানা গেছে। ওয়ালমার্ট ঘোষণা দিয়েছে, ৩০ শতাংশ অর্ডার কমিয়ে দেবে। এতে আতঙ্কে পড়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা মনে করেন, আবারও সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প। গত দুই ধাপে প্রায় ৭৫ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় এমনিতেই সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এমনিতেই উত্পাদন ব্যয় বেড়ে গেছে পোশাকশিল্পে। এরমধ্যে পোশাকের দাম তো বাড়ায়ইনি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো, উলটো এখন অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণে পোশাকশিল্প করোনা মহামারির সময়কার মতো আবারও গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে। একের পর এক ধাক্কায় চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের প্রধান রফতানি খাত। বৈশ্বিক সংকটের কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক ক্রয়ের নতুন আদেশ দেওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে। বিগত কয়েক মাসে গড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ রফতানি আদেশ কমে গেছে।

বৈশ্বিক সংকটের কারণে শুধু ওয়ালমার্ট নয়, বিশ্বের অনেক দেশের নামিদামি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও এখন অর্ডার বাতিল করছে। এখন গড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ অর্ডার কম আসছে গার্মেন্টস শিল্পে; যা দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ওয়ালমার্টের নতুন অর্ডার কমানোর প্রভাব বাংলাদেশে তো অবশ্যই পড়বে। বিশেষ করে আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বছর জুড়ে শুধু ওয়ালমার্টেরই কাজ করে থাকে। যদি ওয়ালমার্ট অর্ডার কমিয়ে দেয় তাহলে বহু কারখানা সংকটে পড়বে। কারণ হুট করেই তো নতুন আরেকটি বায়ারের কাজ জোগাড় করা যাবে না।

বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানাচ্ছে, পোশাক কেনার খরচ কমিয়ে ফেলছেন ক্রেতারা। পরিস্হিতি স্বাভাবিক না হলে পোশাকের কেনাবেচায় দীর্ঘমেয়াদি ভাটা পড়বে। এই পরিস্হিতি ঠিক কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তাও বলতে পারছেন না কেউই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক পরিস্হিতি স্বাভাবিক অবস্হায় ফেরাতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে।

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব ইউরোপ-আমেরিকা অঞ্চলের অনেক দেশেই পড়েছে। এজন্য আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল পোশাক রফতানির ওপর আবার আঘাত আসতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তৈরি পোশাক খাতের ওপর থেকে অতিনির্ভরতা কমিয়ে রফতানি বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা। সব সময় রাজস্ব আহরণের দৃষ্টিকোণ থেকে রফতানি খাতকে দেখা হচ্ছে। এতে স্বল্প মেয়াদে সরকার রাজস্ব পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে রফতানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। শুধু গার্মেন্টস খাতকে প্রাধান্য না দিয়ে পাশাপাশি অন্য খাতেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতি বাড়াতে আঞ্চলিক বাণিজ্য বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে প্রায় সময়েই। অনেক বাধা বিপত্তির কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের রফতানি বাণিজ্য হোঁচট খাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষিজাত শিল্প পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় এর বাজার বিস্তৃতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য সময়োপযোগী, কার্যকর, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্হায় কার্যকর অংশগ্রহণের জন্য রফতানি বহুমুখীকরণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশের রফতানি খাত এখনো গুটিকয়েক পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমাদের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে পোশাকশিল্প থেকে। এরপর রয়েছে চামড়া, পাটজাত পণ্য ও ওষুধ পণ্য। স্বল্প পণ্যের ওপর এই অতিনির্ভরতা রফতানি নৈপুণ্য এবং অর্থনৈতিক স্হায়িত্বশীলতা উভয় দিক থেকে দুশ্চিন্তার। কাজেই রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। প্রচলিত পণ্যের বাইরে আরো কিছু পণ্যের রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে গ্লাস, ইলেকট্রনিক পণ্য, সিরামিকস, হালকা প্রকৌশল পণ্য, সিমেন্ট, আইটি পণ্য, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ছোট জাহাজ প্রভৃতি। শুধু পণ্য নয়, রফতানি গন্তব্যেও বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। দেশের রফতানি বাজার প্রধানত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক। মূলত বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকারমূলক ও শুল্ক সুবিধার কারণে বাজার প্রবেশাধিকারে তুলনামূলক ভালো করেছে বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সেখানে বাজার ধরে রাখা কঠিন। তাই নতুন রফতানি গন্তব্যের অন্বেষণ দরকার। জাপান, রাশিয়া, ব্রাজিল, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় রফতানি গন্তব্য হতে পারে।

এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের কথা উল্লেখ করা যায়। পোশাক পণ্যের বাইরে দেশটি ইলেক্ট্রনিক পণ্য, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, পাদুকা পণ্য এবং কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজ অবস্হান টেকসই করছে। রফতানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ইসু্য পণ্যের আন্তর্জাতিক মান ও কমপ্লায়েন্স অর্জন। এজন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া মান ও খরচ বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক না হলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকা কঠিন হবে। রফতানি বহুমুখীকরণে দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করা বিশেষভাবে জরুরি।

 

বাংলার বিবেক /এএম

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 BanglarBibek
Customized BY NewsTheme