স্পোর্টস ডেস্ক : সাগরিকা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে ডাকা হয় এই নামে। সেখানেই গতকাল উইন্ডিজ শিবিরের উপর দিয়ে টাইগারদের ক্রিকেটীয় ঝড় বয়ে যায়। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় এই ম্যাচ জিতে তামিমের বাংলাদেশ করল ‘বাংলাওয়াশ’ উদযাপন। এমন একটি ম্যাচে জয়ের প্রত্যাশা ছিল আগে থেকেই। তাই যতরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সবই যেন করার চেষ্টা করলেন তামিমরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিনটি বিভাগেই নিজেদের দেখে নিয়েছেন স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজে তৃতীয়টিও জেতা হলো টাইগারদের, ১২০ রানের বড় ব্যবধানে। ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ হলেন ক্যারিবীয়রা।
একদিনের ক্রিকেটে এ নিয়ে চৌদ্দবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। সবমিলে বাংলাদেশের ২৬তম সিরিজ জয়ের উদযাপন।
বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৯৭ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ৪৪.২ ওভার শেষে ১৭৭ রানে থেমে যায়। ম্যাচ সেরার কৃতিত্ব পেলেন মুশফিকুর রহিম এবং সিরিজ সেরার কৃতিত্ব পেলেন আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা সাকিব আল হাসান। এমন একটি সিরিজ জয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তবে এই জয়ের ফলে আরেক সাফল্য এসে দেখা দিয়েছে টাইগার শিবিরে। আইসিসি সুপার লিগে পয়েন্ট টেবিলে পাকিস্তানও ইংল্যান্ডকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে এখন বাংলাদেশ। যা কিনা একটা সময় ২০২৩ বিশ^কাপে সরাসরি খেলার সুযোগ করার হাতিয়ার হিসেবে দাঁড়াবে।
কিন্তু তাই বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের এমন দশা! যারা একটা সময় ক্রিকেটে বিশ^ কাঁপিয়েছিলেন। করোনার দোহাই দিয়ে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে খেলতে আসার খেসারত দিতে হলো তাদের। ম্যাড় ম্যাড়ে সিরিজে যা হওয়ার তাই হলো, তামিমদের কাছে পাত্তাই পেল না উইন্ডিজরা।
যদিও একটা সময় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ দলও এমন সময়ের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিল। আগে ব্যাট করে দুইশ করাই কষ্ট হয়ে যেত। পরে ব্যাট করলে স্কোরবোর্ডে লক্ষ্য না দেখে পুরো ৫০ ওভার খেলার চেষ্টা করা হতো। সময় বদলেছে। টাইগাররা এখন বাইশ গজের লড়াইয়ে আইসিসির নতুন বিজ্ঞাপন। ২০১৫ বিশ^কাপের পর ২০১৯ বিশ^কাপেও সাকিব-তামিমরা মাতিয়েছিলেন বিশ্ব।
তবে সময় কখনো কখনো দল পাল্টেও ফিরে আসে! তেমনি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও ফিরে এসেছে এমন সময়।
সিরিজ তিন ম্যাচের। প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে দেড় শ রানও তুলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ম্যাচে পরে ব্যাট করেছে সফরকারী দল।
জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ২৯৮ রান। কিন্তু ‘শিক্ষানবিস’ ওয়ানডে দল গড়া ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং দেখে কখনো মনে হয়নি, লক্ষ্যটা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা আছে! অন্তত ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে তা মনে হয়নি।
এদিকে তামিমরা নিজেদের বিভিন্ন ত্রুটিগুলো ভালো করে দেখার সুযোগ কাজে লাগালেন। ম্যাচ শেষে তামিম কণ্ঠে তেমনি শব্দগুলো বেরিয়ে এসেছে। তাই এমন একটি সিরিজ জয়ের উদযাপনে যতটা উৎসব থাকার কথা ততটা মিলেনি তার ঠোঁটে। অধিনায়কের মুখের বাঁকা হাসিতে পরিষ্কার, এই সিরিজ জয়ের অতটা খুশি হওয়ার কিছু নেই! সামনের ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে তামিম ইকবাল।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই ফেলে আসা সময়ের মতো এবারের বাংলাওয়াশ থেকেও কিছু উন্নতি খুঁজে নিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম ওয়ানডেতে ৩২.২ ওভার ব্যাট করে ১২২ রান তুলতে পেরেছিল সফরকারীরা। পরের ম্যাচে আরেকটু বেশি সময়, ৪৩.৪ ওভার ব্যাট করে রানও বেশি তুলেছিল ১৪৮ রান।
গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়ে ৪ বল বেশি খেলতে পেরেছে জেসন মোহাম্মদের দল। দলীয় রানটা সে তুলনায় আগের দুই ম্যাচের চেয়ে সন্তোষজনক, ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট। ব্যাটিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার ইচ্ছার লেশমাত্র দেখা যায়নি।
ক্যারিবীয় টপ অর্ডার আগের দুই ম্যাচের মতো এদিনও ছিল ব্যর্থ। বলার মতো লড়াই যিনি করেছেন, তিনি আগের ম্যাচের ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার রোভম্যান পাওয়েল।
আগের ম্যাচে আটে নেমে ৪১ রান করা পাওয়েলকে ছয়ে পাঠিয়েছিল ক্যারিবীয় ম্যানেজমেন্ট। তিনিই ৪৭ রান করে যা একটু লড়েছেন। নইলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস দেড় শ রানের বেশি যেতে পারত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল।
দলীয় শতরানের আগেই ৫ উইকেট পড়ে যায় তাদের। শেষ ৫ উইকেট পড়েছে ৮৪ রানে। সফরকারী দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আঁচ না পেয়েই হয়তো ইচ্ছেমতো বোলার ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক তামিম। তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি হাত ঘুরিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য সরকার, এমনকি নাজমুল হোসেন শান্তও!
সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সাইফউদ্দীন ৫১ রানে নিলেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেলেন মোস্তাফিজ ও মিরাজ। ১ উইকেট সৌম্যের। পাওয়েলের উইকেটটি পেয়েছেন তিনি।
এর আগে টস জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ। প্রথমেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তামিমদের ব্যাটিং পরীক্ষাটাও হয়ে গেল। দলীয় স্কোরকে তিন শ’র কাছাকাছিতে নিয়ে গেলেন তারা। কোন সেঞ্চুরি না হলেও এসেছে চার ফিফটি। প্রত্যাশিত ব্যাটসম্যানরাই পেয়েছে রানের দেখা।
তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- তিনজনই ৬৪ রান করে করেন। তামিম ৮০ বলে ৬৪ রান করে বিদায় নেওয়ার পর দলের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিক। ৮১ বলে ৫১ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। শেষদিকে চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন মুশফিক ও রিয়াদ।
মুশফিক ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৫ বলে ৬৪ এবং রিয়াদ ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৪ রান করেন। রিয়াদ অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেও লিটন দাস, সৌম্য সরকারদের ব্যর্থতার দিনে দলীয় সংগ্রহ ৩০০ স্পর্শ করতে পারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন আলজারি জোসেফ ও রেয়মন রেইফার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বাংলাদেশ : ২৯৭/৬ (৫০ ওভার)
রিয়াদ ৬৪*, মুশফিক ৬৪, তামিম ৬৪, সাকিব ৫১
আলজারি ৪৮/২, রেইফার ৬১/২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৭৭/১০ (৪৪.২ ওভার)
পাওয়েল ৪৭, বোনার ৩১
সাইফউদ্দিন ৪৯/৩, মুস্তাফিজ ২৪/২, মিরাজ ১৮/২
ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী
সিরিজ : বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
বাংলার বিবেক ডট কম – ২৬ জানুয়ারি, ২০২১
Leave a Reply