আল্–মারুফ, রাবি প্রতিনিধি: ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়া বাঙালী জাতিসত্তা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির প্রধান ধারক এবং বাহক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে লালন, চর্চা এবং পৃষ্টপোষকতা করে আসছে। তারই লক্ষ্যে প্রতিবছর ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে চারুকলা অনুষদ বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব পালন করে থাকে। যেখানে অনুষদের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকমন্ডলী এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের সামগ্রিক প্রচেষ্টা এবং অংশগ্রহনমূলক কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা মাসের বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয়। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রতিবারের মত এবারেও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা নিয়ে সাজানো হয়েছে বসন্ত উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গনে অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এবছর বরাবরের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি নতুন কিছু পরিকল্পনা যুক্ত করে দুইদিন ব্যাপি পালিত হচ্ছে “বসন্ত উৎসব – ১৪২৯”। অনুষ্ঠান চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। এরপর চারুকলা গেট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার সেই গেটে এসে কাঁথা পোড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। চারুকলা অনুষদের স্বপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীবৃন্দের আয়োজনে উক্ত অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী। এতে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্যদ্বয় প্রফেসর ড. মো. সুলতান উল ইসলাম এবং প্রফেসর ড. মো. হুমায়ন কবির। আরও উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
এবার বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় একটু যেন বেশি রঙিন করে তোলা হয়েছে চারুকলা ভবন ও তার আশপাশ। দেওয়ালে দেওয়ালে চিরায়ত বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন তারা। শুধু বাইরে নয়, চারুকলা অনুষদের ভেতরেও সমানতালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন শৈল্পিক চিত্রকর্ম। পলাশতলায় বানানো হয়েছে এবারের ডামি ভাস্কর্য। বসন্ত ঘিরে পাঁচটি ডামি তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটি বসন্তবাউড়ি, একটি পরিযায়ী হাঁস, একটি পলাশ ও একটি শিমুল ফুল। যার মাধ্যমে ভালোবাসা দিবসের চিহ্নও পাওয়া যায়।
প্রতিবছরেই দর্শকের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি তথা সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে জানার অগাধ চাহিদাকে মাথায় রেখেই এবার বিশেষ পরিকল্পনা সংযোজন করা হয়েছে। যাতে করে এই অনুষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে খুব দ্রুতই বাংলাদেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের যে নিজস্ব সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ভান্ডার রয়েছে সেখান থেকে বিলুপ্ত প্রায় কিছু অংশের উপস্থাপন থাকছে এবারের অনুষ্ঠানে। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো বায়োস্কপ প্রদর্শন, নাগরদোলা, গান, যাত্রাপালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বরাবরের মতো থাকছে ব্যান্ড সঙ্গীতের দল, বাউল গান, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, কবিতা, নাটিকা ইত্যাদি।
এ নিয়ে চারুকলা অনুষদের পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী তন্ময় তানভীর বলেন, বসন্ত উৎসব পালনের যে ধারা সেই ধারা পালনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে সবার সামনে বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। সে জন্য বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বাহককে আমরা এর মধ্যে রেখেছি। আমরা পুরো প্রোগ্রামটা কয়েকটা ভাগে ভাগ করেছি। এর মধ্যে নাচ, গান, কবিতা ইত্যাদি রেখেছি। অনুষদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পারফর্মেন্সসহ থাকছে কার্নিভাল, অনেস্বর, কাকতাল ব্যান্ডদল। মোটকথা, পুরো প্রোগ্রামে আমরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং এর মাধ্যমে বসন্ত বরণকে জাতীয়করণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনুষদের সকল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমাদের আজকের এই অনুষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পাশাপাশি অর্থনীতি, ফোকলোর, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজেদের নানা আয়োজনে ঋতুরাজকে বরণ করে নিয়েছে।
Leave a Reply