রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এতে বাজারে দাম কমার কথা থাকলেও খেজুর ও চিনির দাম উল্টো বেড়েছে। শুল্ক কমানোর পর শুধু সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমেছে।
গতকাল রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার, বাড্ডা কাঁচাবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের শরবতের জনপ্রিয় অনুষঙ্গ লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে খুচরায় আকারভেদে প্রতিটি ১২ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। লেবুর হালি ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। প্রতিটি সবরিকলা ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা। কলার হালি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি রমজানেই তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এটি এখন ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা পেঁপে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পেয়ারা ১০০ টাকা কেজি।
বিদেশি ফলের মধ্যে মাল্টা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সবুজ আঙুর ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, কালো আঙুর ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা এবং আপেল মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারির মুখরোচক পদ বেগুনির উপাদান বেগুনের দামও চড়া। বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ছোলা ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা ও খোলা চিনি খুচরায় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকার মতো বেড়ে এখন দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা। রাজধানীতে খুচরায় সাধারণ মানের খেজুর কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের খেজুর প্রতি কেজি ৮০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা।
টমেটো ও কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। টমেটো প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ধনেপাতা প্রায় ২০০ টাকা কেজি। দেশি শসা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাড্ডা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মেহেদী হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পাইকারি বাজারেই শসা, বেগুন ও লেবুর দাম অনেক বাড়তি। বেশি দামে কেনার কারণে আমাদেরও বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে রোজা কয়েকটা চলে গেলে দাম কিছুটা কমে যাবে।’
গতকাল মহাখালী কাঁচাবাজারের এক ফলের দোকানে দর-কষাকষি করে আধা কেজি সাধারণ মানের খেজুর, তিনটি আপেল, দুটি মাল্টা ও এক হালি সবরিকলা কেনন আলতাব আলী। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এই কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগে কখনো এক কেজির নিচে ফল কিনিনি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। এ ছাড়া কিছু ফল না খেলে শরীরের দুর্বলতা কাটে না। তাই হাফ কেজি খেজুরের সঙ্গে দু-তিনটি করে মিলিয়ে কিছু ফল কিনেছি। প্রথম দু-এক দিন ইফতারে ফল খাব। সামর্থ্য না থাকায় এর পর আর খাওয়ার সুযোগ হবে না। লাগামহীন বাজার পরিস্থিতির কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের চাহিদামতো খাওয়ার দিন চলে গেছে।’
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার পাইকারি বাজারেও বেড়েছে ইফতারের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গতকাল ইফতারের বিভিন্ন পদের মধ্যে বেগুন, শসা, খিরা, ছোলা ও লেবু গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির বাজার বলে পরিচিত মহাস্থান হাট এবং শহরের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত রাজাবাজার ঘুরে দাম বৃদ্ধির এই চিত্র দেখা গেছে। তবে দুই বাজারেই কমেছে পেঁয়াজের দাম।
মহাস্থান হাট-বাজারের এনসিটিবি আড়তদার আইনাল হক জানান, গত সপ্তাহে গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ। রমজানে ইফতারের উপাদান বেগুনের চাহিদা বাড়ায় গতকাল বাজারে এটির দাম বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ। গত সপ্তাহে মহাস্থান বাজারে শসা ও খিরা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ। গতকাল তা বিক্রি হয় এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা মণ।
গত সপ্তাহে এই বাজারে লেবুর পাইকারি হিসেবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা শ দরে বিক্রি হলেও গতকাল তা ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা শ। মহাস্থানে গত সপ্তাহে স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ চার হাজার ৪০০ থেকে চার হাজার ৮০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা মণ।
Leave a Reply