অনলাইন ডেস্ক : শেরপুরে অজানা রোগে এক মাসের ব্যবধানের অন্তত ৫০ গরুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ খামারীরা । শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তিলকান্দীতে দুগ্ধগ্রাম বলে পরিচিত এলাকায় এই গরুর মরক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাকুরিয়ার তিলকান্দী গ্রামের পূর্বপাড়া ও ভাটিয়াপাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছোট বড় গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০-৬০ লিটার দুধ আসে। এখানকার উৎপাদিত দুধ জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাতেও বিক্রি করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ তথা সরকার ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে গ্রামটিকে দুগ্ধ গ্রাম ঘোষনা করে। প্রথম দিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের নজরদারী থাকলেও এখন একদমই নজর নেই দুগ্ধ গ্রামের প্রতি বলে অভিযোগ এখান একাধিক খামারীদের।
তাদের মতে গেল একমাসে ৫০-৬০ টি গরু অজানা রোগে মারা গেলেও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বরং অনেক চেষ্টা তদবির করে তাদের গরু চিকিৎসা করাতে আনা গেলেও গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা ফি হিসেবে।
তিলকান্দি তালুকদারবাড়ী এলাকার খামারী আব্দুল আজিজ তালুকদার বলেন, আমার গাভীওটি হঠাৎ করেই মারা গেছে । কোন ধরনের চিকিৎসা সহযোগিতা পায়নি সরকারী ভাবে। এখন জীবিত গরু গুলোও বিক্রি করে দিবো ভাবছি। যেহারে গরু মারা গেছে তাতে করে আমাদের আর খামার টিকিয়ে রাখার ইচ্ছে নাই।
পূর্বপাড়া গ্রামের আরেক খামারী আজিজল হক বলেন , দশ মিনিটের মাথায় আমার দুটি গরু মারা গেছে । যার দাম কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা হবে। আমি এখন দিশেহারা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো কিভাবে মাথায় কাজ করে না। সরকারী ভাবে চিকিৎসা তো পাইনা বরং সরকারী ডাক্তার আনলে ক্ষেত্র বিশেষ ২-৫ হাজার টাকা ভিজিট দিতে হয় তাদের।
খামারী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এতো এতো গরু মারা যাচ্ছে অথচ প্রাণী সম্পদ অফিসে ফোন দিলে সকালের কথা বলে বিকালে আসে আবার কোন সময় আসেই না। আর আসলেই ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন। এসময় অন্যান্য খামারীরা খোদ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: পলাশ কান্তি দত্তের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ তুলেন।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি শেরপুর সদর উপজেলার শাখার আহবায়ক সোলাইমান আহাম্মেদ বলেন, আমরা অবাক হয়ে যায় সরকার এই গ্রাম দুটিকে দুগ্ধ গ্রাম ঘোষনা দিয়েছে অথচ খামারীদের এমন দু:সময়ে প্রাণী সম্পদ তাদের পাশে নেই। ময়নাতদন্তের নামে গরুর বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে গিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করছেন। গরু মারা যাওয়াতে যেখানে খামারীরা চরম বিপাকে সেখানে উপজেলা প্রাণী সম্পদের লোকজনের গরু চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যা লজ্জাজনক, হতাশার।
তবে খোদ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কর্মকর্তা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা: পলাশ কান্তি দত্ত তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্কিকার করেন। এই তথ্যগুলো মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবী করেন। গরুর চিকিৎসায় কোন ধরনের টাকা নেয়া হয়নি তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ বাবদ কিছু টাকা দাম হিসেবে নেয়া হয়।
এদিকে যে গরুগুলো মারা গেছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে রিপোর্ট এলে পরবর্র্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন জানালেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি চিকিৎসা করে খামারীদের কাছে টাকা নেয়ার ব্যপারে বলেন, আমরা সেবাদান দেয়া প্রতিষ্ঠান, আমাদের কাজই হলো সেবা দেয়া। যদি কেউ তার ব্যতয় ঘটায় তার বিরুদ্ধে অব্যশয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
বাংলার বিবেক /এম এস
Leave a Reply