অনলাইন ডেস্কঃ সন্তানের মতোই গাভিটি লালনপালন করতেন বগুড়া সদরের বৃদ্ধ বিশ্বনাথ-নিত্তবালা দম্পতি। টিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে নিত্তবালা এবং আরেকটি গোয়ালঘর বানিয়ে গরুসহ বসবাস করতেন বিশ্বনাথ। মন্দিরের খাস জমিতে বসবাস করা দম্পতির চাষযোগ্য জমি নেই। গাভির দুধ ও বাছুর বিক্রি করে সংসারের অধিকাংশ খরচ চলত তাদের।
গত ৩১ আগস্ট প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির রাতে বিশ্বনাথ ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের দরজা কেটে গাভিটি চুরি করে দুর্বৃত্তরা। ঘুম থেকে জেগে দেখেন গোয়াল শূন্য। চুরির সময় গাভিটি ছিল ১০ মাসের গর্ভবতী। বিশ্বনাথ সরকার (৭৫) ও নিত্তবালা সরকার (৬৬) সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মণ্ডলধর গ্রামের বাসিন্দা। একমাত্র মেয়ে সুফলা রানীর বিয়ে হয়েছে। ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় অভিযোগ বা মামলা করেননি। তবে ঘটনার দিন জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ ঘটনাস্থলে যান। পরে কিছু অর্থ সহায়তা দেন। কিন্তু একমাত্র অবলম্বন গাভির সন্ধান না পেয়ে কান্না থামছে না তাদের।
বিশ্বনাথ সরকার বলেন, গর্ভবতী গাভিটির দাম ছিল অন্তত ২ লাখ টাকা। ছয় বছর ধরে সন্তানের মতো আগলে রেখেছিলেন। এতে সংসারের চাকা সচল ছিল। এখন সব শেষ। টিনের ঝুপড়ি ঘরে চুরির ভয়ে গাভি নিয়ে গোয়ালঘরেই থাকতেন। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির রাতে মেঘের গর্জনে জেগে দেখেন, গাভিটি নেই। অনেক খুঁজেও সন্ধান পাননি। এখন বাড়ির পাশের জমিতে দিনে ১৫০ টাকার চুক্তিতে আগাছা পরিষ্কার করেন। এ কাজ প্রতিদিন থাকে না। এ বয়সে অন্য কাজ করার শক্তিও নেই।
থানায় অভিযোগ বা মামলা না করার বিষয়ে বিশ্বনাথ বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে এসেছিল। বাজার করার জন্য টাকাও দিয়েছে। গাভিটি খুঁজতে সহযোগিতা করছে। তাঁর ভাষ্য, ‘তারা অভিযোগ দিতেও বলেছিল। তবে আমি মূর্খ মানুষ। এত কিছু বুঝি না।’ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অবলম্বন শেষ জানিয়ে নিত্তবালা সরকার বলেন, এ বয়সে দু’জনের কাজ করার ক্ষমতাও নেই। কিছুদিন পর না খেয়ে থাকতে হবে।
প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, তারা খুব কষ্টে জীবন যাপন করেন। প্রশাসন বা কেউ তাদের পাশে দাঁড়ালে শেষ জীবনে সম্মান নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারতেন। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজিবুল ইসলাম রাজু বলেন, বিশ্বনাথ-নিত্তবালা দম্পতির গাভি চুরির খবর শুনেছেন। তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।
অনেক বলার পরও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দেননি জানিয়ে সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, গাভিটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা আছে।
Leave a Reply